বাংলাদেশ

অগ্রণী ব্যাংকে শেখ হাসিনার দুই লকার জব্দ

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আবারও বড় আলোচনার জন্ম দিয়েছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার ব্যাংক লকার জব্দের খবর। এবার রাজধানীর দিলকুশায় অবস্থিত অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান শাখায় তাঁর নামে থাকা দুইটি লকার জব্দ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫) এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ৭৫১ ও ৭৫৩ নম্বর লকার দুটি শেখ হাসিনার নামে খোলা ছিল। কর ফাঁকি হয়েছে কি না এবং অবৈধ সম্পদের কোনো যোগসূত্র আছে কি না তা খতিয়ে দেখতেই এই লকারগুলো জব্দ করা হয়েছে।

এর আগে, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে রাজধানীর পূবালী ব্যাংকের একটি শাখায় শেখ হাসিনার একটি লকার জব্দ করা হয়। ফলে এখন পর্যন্ত মোট তিনটি লকার জব্দ করল এনবিআর।

কেন লকার জব্দ করা হলো?

কর তদন্ত ও সম্পদের উৎস অনুসন্ধান এখন বাংলাদেশের আর্থিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর একটি। এনবিআর দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আয় ও সম্পদের বৈধতা যাচাইয়ের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, লকার ও সম্পদ সম্পর্কেও সম্প্রতি কঠোর নজরদারি শুরু হয়েছে।

সূত্র মতে, শেখ হাসিনার লকারগুলোতে নগদ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার কিংবা মূল্যবান নথিপত্র থাকতে পারে। তবে সরকারিভাবে এখনও এসব লকারের ভেতরে কী আছে তা প্রকাশ করা হয়নি। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এনবিআর এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ।

শেখ হাসিনা ও ব্যাংক লকার বিতর্ক

শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে টানা প্রায় দেড় যুগ ধরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার কারণে তাঁর আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে সবসময়ই প্রশ্ন ছিল রাজনৈতিক অঙ্গনে। বিরোধী দলগুলো বারবার অভিযোগ করেছে, সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করে তিনি এবং তাঁর ঘনিষ্ঠরা বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন।

লকার জব্দের সাম্প্রতিক পদক্ষেপে বিরোধীরা আবারও সরব হয়েছে। তাদের দাবি, এই অভিযান প্রমাণ করছে যে দুর্নীতি ও কর ফাঁকির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের অবশিষ্ট নেতাকর্মীরা এটিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে দেখছেন।

পূবালী ব্যাংকের লকার জব্দ

শুধু অগ্রণী ব্যাংক নয়, এর আগে পূবালী ব্যাংকের একটি লকারও জব্দ করা হয় শেখ হাসিনার নামে। এনবিআর জানিয়েছে, পূবালী ব্যাংকের লকার থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ও নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে এখনও সময় প্রয়োজন।

এখন পর্যন্ত জব্দ হওয়া তিনটি লকারের সবগুলোতেই তদন্ত চলছে। প্রতিটি লকার খোলার সময় সিআইসি, ব্যাংক কর্মকর্তারা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

২০২৫ সালে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। শেখ হাসিনা বর্তমানে কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছেন না। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে তদন্ত চলছে।

এই পরিস্থিতিতে ব্যাংক লকার জব্দ শুধু একটি আর্থিক তদন্ত নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। অনেকের মতে, শেখ হাসিনার লকার জব্দের ঘটনাটি তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্যও একটি বড় ধাক্কা।

আইন বিশেষজ্ঞদের মতামত

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, লকার জব্দ মানে এই নয় যে মালিক অপরাধী প্রমাণিত হয়েছেন। এটি কেবলমাত্র একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ। তদন্ত শেষে যদি কর ফাঁকি, অবৈধ সম্পদ বা মানি লন্ডারিংয়ের প্রমাণ পাওয়া যায়, তখনই মামলার ভিত্তি তৈরি হবে।

অন্যদিকে, অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের সম্পদ তদন্তে এ ধরনের পদক্ষেপ দেশের অর্থনীতি ও আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা আনতে সহায়ক হবে।

জনগণের প্রতিক্রিয়া

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই খবর নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। অনেকেই বলছেন, “আইনের চোখে সবাই সমান হলে এরকম পদক্ষেপই হওয়া উচিত।” আবার কেউ কেউ মন্তব্য করছেন, “রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে শেখ হাসিনাকে টার্গেট করা হচ্ছে।”

সাধারণ মানুষের মধ্যে একধরনের কৌতূহল তৈরি হয়েছে—আসলে লকারগুলোতে কী আছে? টাকা, সোনা, নাকি গোপন নথিপত্র?

বাংলাদেশে লকার জব্দের ইতিহাস

শেখ হাসিনার লকার জব্দ বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন কোনো ঘটনা নয়। অতীতে বিভিন্ন রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের লকারও কর তদন্তের কারণে জব্দ করা হয়েছিল। তবে দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতার লকার জব্দ হওয়া বিরল ঘটনা।

বিশেষ করে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার লকার জব্দের খবর শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

সম্ভাব্য পরবর্তী পদক্ষেপ

এনবিআর জানিয়েছে, তদন্ত সম্পূর্ণ হওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে লকারগুলোর ভেতরে কী পাওয়া গেছে। যদি কোনো অনিয়মের প্রমাণ মেলে, তবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নতুন মামলা হতে পারে।

অন্যদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও বিচারব্যবস্থায় বড় ভূমিকা রাখবে।

অগ্রণী ব্যাংকে শেখ হাসিনার দুই লকার জব্দের ঘটনা শুধু একটি আর্থিক পদক্ষেপ নয়, বরং রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নতুন অধ্যায়। কর তদন্ত, দুর্নীতি দমন ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা—সব মিলিয়ে এই খবর এখন সবার আলোচনার কেন্দ্রে।

বাংলাদেশের সাধারণ মানুষও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, লকারগুলোর ভেতরে আসলে কী আছে তা জানার জন্য।

MAH – 12876  Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button