তরুণদের শক্তি দেশের অগ্রগতির মূল চালিকাশক্তি

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত ইউথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের তরুণদের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, “তরুণরা দেশের মূল চালিকাশক্তি। তারা যখন জেগে ওঠে, তখন কোনো শক্তি তাদের বাধা দিতে পারে না। আমাদের সাম্প্রতিক ইতিহাসের প্রমাণ রয়েছে, জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানেই আমরা দেখেছি, তরুণরা দেশকে এক নতুন দিক দেখাতে সক্ষম।”
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তার অফিসে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা তরুণদের মেধা, সৃজনশীলতা, কর্মক্ষমতা ও উদ্ভাবনী শক্তিকে দেশের অগ্রগতির মূল শক্তি হিসেবে মূল্যায়ন করেন। তিনি বলেন, “দেশের সামনে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তরুণরা তাদের দক্ষতা, সৃজনশীলতা এবং উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে।”
দেশের অগ্রগতিতে তরুণদের ভূমিকা
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, “যখন তরুণরা এগিয়ে আসে, তখন দেশের সম্ভাবনা সীমাহীন। তরুণরা শুধু দেশকে সমৃদ্ধ করতে পারে না, তারা নতুন ধারণা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সমাজের নানা সমস্যার সমাধানও করতে পারে। আমাদের উচিত তরুণদের ক্ষমতায়ন করা এবং তাদের সম্ভাবনাকে পূর্ণভাবে কাজে লাগানো।”
উক্ত অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা দেশীয় তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সরকারী উদ্যোগসমূহ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামের মাধ্যমে তরুণদের স্বাবলম্বী করতে কাজ করছে। তরুণরা দেশকে সমৃদ্ধ করতে সক্ষম, তাই তাদের পূর্ণ সহযোগিতা করা দরকার। দেশের ভবিষ্যৎ তরুণদের হাতে।”
পুরস্কারপ্রাপ্তদের তালিকা
ইউথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২৫-এ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য মোট ১২ জন তরুণকে পুরস্কৃত করা হয়। প্রতিজনকে নগদ এক লাখ টাকা, সম্মাননা ক্রেস্ট এবং সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়েছে।
যুব উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানে অসাধারণ অবদান
- সুরাইয়া ফারহানা রেশমা (বগুড়া)
- মো. আক্কাচ খান (মাগুরা)
- মো. জাকির হোসেন (নোয়াখালী)
শিক্ষা, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিতে অসাধারণ অবদান
- মো. খালেদ সাইফুল্লাহ (ঝালকাঠি)
- মো. শাহাদৎ হোসেন (গাইবান্ধা)
দেশপ্রেম, বীরত্ব ও সাহসিকতার ক্ষেত্রে
- মো. দ্বীপ মাহবুব (পাবনা)
- হাসান শেখ (রাজশাহী)
- মো. জামাল হোসেন (লালমনিরহাট)
- নুরুল আবছার (কক্সবাজার)
- মো. মুহিন (রাজশাহী)
ক্রীড়া, কলা ও সাংস্কৃতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান
- আফঈদা খন্দকার (সাতক্ষীরা)
- উছাই মং মার্মা (বান্দরবান)
উক্ত অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাহবুব-উল আলম।
তরুণদের ক্ষমতায়নের গুরুত্ব
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যুব সমাজকে ক্ষমতায়ন করা দেশের স্থায়ী উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে তরুণরা নতুন উদ্ভাবন, প্রযুক্তি ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে অগ্রগতি সম্ভব করছে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেখা গেছে, যেখানে যুব শক্তিকে সমানভাবে সুযোগ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, সেখানে সেই দেশগুলোর প্রতিষ্ঠান, অর্থনীতি এবং সামাজিক অগ্রগতি দ্রুত বৃদ্ধি পায়। অধ্যাপক ইউনূসও উল্লেখ করেছেন, “আমাদের তরুণরা শুধু কাজ করতে জানে না, তারা নতুন উদ্যোগ ও সামাজিক পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত। এদের মধ্যে উদ্যোক্তা মনোভাব, সামাজিক সচেতনতা এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করার ক্ষমতা রয়েছে।”
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তরুণদের উদ্ভাবনী শক্তি
দেশের যুব সমাজের সামনে রয়েছে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ। যেমন:
- বেকারত্ব
- শিক্ষা ও দক্ষতা বিকাশে অসমতা
- উদ্যোক্তা পরিবেশের সীমাবদ্ধতা
- সৃজনশীল উদ্যোগে সীমিত সহায়তা
এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় সরকার এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রশিক্ষণ, স্টার্টআপ সহায়তা, টেকনোলজি হাব ও উদ্যোক্তা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছে। যুব সমাজের এই সহায়তায় তরুণরা দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারবে।
তরুণদের কর্মমুখী উদ্যোগ
জাতীয় পর্যায়ে যুব সমাজের সৃজনশীলতা ও কর্মক্ষমতা উদাহরণ স্বরূপ:
- তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নতুন সফটওয়্যার ও অ্যাপ্লিকেশন তৈরি।
- শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন অনলাইন শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম।
- সমাজসেবায় স্বেচ্ছাসেবী উদ্যোগ ও এনজিও কার্যক্রম।
- ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস আশা প্রকাশ করেন, এই ধরনের উদ্যোগ দেশকে প্রযুক্তিগত, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করবে।
সরকারের পদক্ষেপ
সরকার তরুণদের সমর্থন করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে:
- প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান: তরুণদের চাকরি ও দক্ষতা বৃদ্ধি।
- উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ: নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্য সহায়তা।
- সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবন: বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও সামাজিক উদ্যোগকে উৎসাহিত করা।
- অন্তর্ভুক্তিমূলক সুযোগ: নারী ও অনগ্রসর সম্প্রদায়ের তরুণদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, “যুব সমাজের শক্তি দেশের স্থায়ী উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। সরকারের সমস্ত প্রচেষ্টা তরুণদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও তাদের প্রতিভাকে কাজে লাগানোর দিকে। আমরা চাই তরুণরা শুধু দেশপ্রেমিক হোক না, তারা দক্ষ, উদ্যোগী ও উদ্ভাবনী হোক।”
বিশেষ সংযোজন: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রভাব
ড. ইউনূস উল্লেখ করেছেন যে, জুলাই গণঅভ্যুত্থান প্রমাণ করে, তরুণরা যখন একত্রিত হয়, তখন তারা সমাজে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। এটি শুধুমাত্র রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তরুণদের শক্তির প্রতিফলন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যুব সমাজের একতাবদ্ধতা, উদ্ভাবন এবং নেতৃত্ব দেশের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। এজন্য সরকার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে।
তরুণ সমাজ দেশের ভবিষ্যৎ ও অগ্রগতির মূল চালিকাশক্তি। সরকার, সমাজ এবং পরিবার মিলিতভাবে যদি তাদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগায়, তাহলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক, সামাজিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে সক্ষম হবে। ইউথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ এর মাধ্যমে দেশের যুবসমাজকে স্বীকৃতি দেওয়া, তাদের উদ্দীপনা ও ক্ষমতাকে আরও বিকশিত করতে সহায়ক হবে।
MAH – 12829 Signalbd.com