‘তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে’

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর দীর্ঘ প্রায় ১৯ বছর পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়েছেন। রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাবর জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়েও আলোচনার সুযোগ হয়েছে।
বাবর আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “ইনশাআল্লাহ, খুব দ্রুতই তিনি দেশে ফিরে আসবেন। এ জন্য আমরা সবাই দোয়া চাই।”
বৈঠকের মূল বিষয়বস্তু
সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর জানান, বৈঠকটি ছিল মূলত সৌজন্যমূলক। তবে শুধু সৌজন্যের সীমায় সীমাবদ্ধ না থেকে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচন ঘিরে নানা বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের জায়গা আছে। বিশেষ করে অতীতে লুট হওয়া অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সীমান্ত সুরক্ষার বিষয়ে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
তারেক রহমানের দেশে ফেরা প্রসঙ্গ
বৈঠকে আলোচনার অন্যতম বিষয় ছিল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বাবর বলেন, “তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয় নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে কথা হয়েছে। আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি শিগগিরই দেশে ফিরবেন। এটি আমাদের দলের জন্যও আশার বার্তা।”
এই মন্তব্যের মাধ্যমে বাবর বিএনপির ভেতরে ও বাইরে চলমান আলোচনাকে আরও জোরালো করলেন। বিশেষ করে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন দলটির কৌশল ও অবস্থানকে নতুন মাত্রা দিতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলে মত প্রকাশ করা হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা
বৈঠকে বাবর বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা উন্নত করার আন্তরিকতা আছে। তবে বাস্তবে চ্যালেঞ্জ অনেক। বিশেষ করে যেসব অস্ত্র অতীতে লুট হয়ে গেছে, সেগুলো উদ্ধার করতে না পারলে ভবিষ্যতে অস্থিতিশীলতা তৈরি হতে পারে।
তিনি আরও জানান, বিএনপি সরকারের যেকোনো ইতিবাচক প্রচেষ্টাকে সহযোগিতা করতে আগ্রহী।
নির্বাচনের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে উদ্বেগ
আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল বৈঠকের আরেকটি আলোচনার বিষয়। বাবর বলেন, জনগণের আস্থা ফেরাতে নির্বাচন ঘিরে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি।
এ প্রসঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, পার্শ্ববর্তী দেশে বসে কিছু শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে বৈঠক করছে আওয়ামী লীগ, যারা নাকি নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র করছে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সতর্ক করেছেন তিনি।
বাবরের রাজনৈতিক অতীত
লুৎফুজ্জামান বাবর একসময় বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে ২০০৭ সালের ২৮ মে তিনি গ্রেপ্তার হন। পরবর্তী সময়ে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলাসহ একাধিক মামলায় তার বিরুদ্ধে দণ্ড দেওয়া হয়।
২০২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর বিশেষ ক্ষমতা আইনের চোরাচালান মামলায় মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস পান বাবরসহ পাঁচজন। এর মধ্য দিয়ে তিনি দীর্ঘদিন পর আবারও রাজনৈতিক আলোচনায় আসেন।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ বিশ্লেষণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে তারেক রহমানের দেশে ফেরার আলোচনা বিএনপির রাজনীতিকে নতুন মাত্রা দিতে পারে। একদিকে দলীয় কর্মীদের মনোবল বাড়বে, অন্যদিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে নতুন করে কৌশল নির্ধারণে প্রভাব ফেলবে।
তবে বাস্তবে তিনি কত দ্রুত দেশে ফিরতে পারবেন, আইনি প্রক্রিয়ায় কোনো বাধা তৈরি হবে কিনা—এসব প্রশ্ন এখনো রয়ে গেছে।
পরিশেষে
লুৎফুজ্জামান বাবরের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক নতুন রাজনৈতিক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রসঙ্গ সামনে আসায় রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এখন দেখার বিষয়, বিএনপি কীভাবে এই ইস্যুকে কাজে লাগায় এবং সরকার এ বিষয়ে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়।
এম আর এম – ১৩২৩,Signalbd.com