ভালুকায় দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২, আহত অন্তত ১০ জন

ময়মনসিংহের ভালুকায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন দুইজন যাত্রী। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভরাডোবা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মহাসড়কের এক লেনে চলমান সংস্কার কাজের কারণে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়েছিলো। এ সময় শ্যামলী পরিবহন ও আয়ান পরিবহনের দুটি বাস মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
দুর্ঘটনার বিস্তারিত
ভরাডোবা তাসরিফ কটন মিলের সামনে সকাল প্রায় আটটার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। জানা যায়, ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস এবং ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী আয়ান পরিবহনের আরেকটি বাস বিপরীত দিক থেকে আসার সময় সরু পথে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মুখোমুখি ধাক্কা খায়। সংঘর্ষ এতটাই ভয়াবহ ছিলো যে উভয় বাসের সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায়।
ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়। তবে তাদের পরিচয় এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদেরকে প্রথমে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
পুলিশ ও প্রশাসনের বক্তব্য
ভালুকা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, “সকালে মহাসড়কের সংস্কার কাজের কারণে এক লেন দিয়ে গাড়ি চলাচল করছিলো। এ সময় দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলেই দুইজন নিহত হন। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত বাস দুটি জব্দ করা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। দুর্ঘটনার পর কিছু সময়ের জন্য ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় মহাসড়ক স্বাভাবিক করা হয়।
মহাসড়ক সংস্কার ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দেশের অন্যতম ব্যস্ত সড়ক। প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী এ পথে যাতায়াত করেন। কিন্তু মহাসড়কের নিয়মিত সংস্কার কাজ ও সঠিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার অভাবের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক লেনে যান চলাচল, দ্রুতগামী বাস ও চালকদের অসতর্কতা এসব দুর্ঘটনার প্রধান কারণ।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে প্রতি বছর গড়ে ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায়। এর একটি বড় অংশ ঘটে মহাসড়কে।
স্থানীয়দের ক্ষোভ
দুর্ঘটনার পর স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মহাসড়কের সংস্কার কাজ চলছে। কিন্তু কোনো বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয়নি। তারা অভিযোগ করেন, ঠিকাদার ও কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে।
ভরাডোবার এক দোকানদার বলেন, “প্রায়ই এখানে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে। আজকের মতো ভয়াবহ দুর্ঘটনা আগে হয়নি। দ্রুত মহাসড়কের কাজ শেষ না হলে আরও বড় বিপদ ঘটতে পারে।”
সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে করণীয়
সড়ক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দুর্ঘটনা কমাতে কিছু জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন—
- দ্রুত মহাসড়কের সংস্কার কাজ শেষ করা।
- এক লেন চলাচলের সময় বিকল্প রুট চালু রাখা।
- চালকদের প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
- ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানো।
- দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকায় সিসিটিভি ও সতর্কতা চিহ্ন বসানো।
অতীতের দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে একাধিক বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। ২০২৪ সালের জুন মাসে একই এলাকায় একটি ট্রাক ও বাসের সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হয়েছিলেন। একইভাবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস উল্টে গিয়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছিলো।
সরকারের উদ্যোগ
সরকারি তথ্যমতে, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। হাইওয়ে পুলিশকে আরও শক্তিশালী করা, মহাসড়কে টোল আদায়ের মাধ্যমে আধুনিক সিস্টেম চালু করা, দ্রুত পুনর্নির্মাণ প্রকল্প শেষ করা এসব উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম। তবে বাস্তবে এসব কার্যক্রম কতটা কার্যকর হচ্ছে, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ।
ভালুকার আজকের এই দুর্ঘটনা আবারও প্রমাণ করলো সড়ক নিরাপত্তা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। নিহত দুইজনের পরিবার শোকে ভেঙে পড়েছে, আহতদের পরিবার উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছে। সড়কে নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা এখন সময়ের দাবি। বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারের পাশাপাশি চালক, যাত্রী এবং স্থানীয়দেরও সচেতন হতে হবে। তাহলেই কমবে দুর্ঘটনা, বাঁচবে হাজারো প্রাণ।
MAH – 12777, Signalbd.com