পাওনা টাকা আদায়ে বাজারে ডিজিটাল ব্যানার টানালেন বৃদ্ধ ইনতাজ

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার টঙ্গীরচর এলাকার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব কাঠুরে ইনতাজ আলী ব্যাপারী অভিনব পদ্ধতিতে নিজের পাওনা টাকা আদায় করতে বাজারে ডিজিটাল ব্যানার টানিয়েছেন। প্রায় পাঁচ বছর ধরে এলাকার ছয় জনের কাছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা পাওনা থাকলেও দীর্ঘ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তিনি টাকা ফেরত পাননি।
ডিজিটাল ব্যানারের বিশদ
বৃদ্ধ ইনতাজ আলী একটি ৪ ফুট বাই ৫ ফুটের ডিজিটাল ব্যানার তৈরি করেছেন। ব্যানারে দেনাদারদের নাম ও টাকার পরিমাণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ব্যানারের কিছু তথ্য হলো:
- দিলু ব্যাপারী: ৬ হাজার টাকা
- হুমায়ুন ব্যাপারী: ২ হাজার ৬০০ টাকা
- সুজন ব্যাপারী: ৭৫০ টাকা
- নজরুল ব্যাপারী: ২ হাজার ৪০০ টাকা
- বারেক গাছের ব্যাপারী: ১৩ হাজার টাকা
- রতন গাছ কাটে: ২০০ টাকা
ব্যানারের নিচে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘থানা থেকে অর্ডার, এই বিষয়টা এলাকাবাসীকে জানানোর জন্য। যদি এই টাকা না দেন তাহলে থানায় মামলা হবে।’
ঘটনাস্থলের প্রেক্ষাপট
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইনতাজ আলী আগে কাঠ কেটে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু বয়স ও নানা রোগের কারণে বর্তমানে তিনি আগের মতো কাজ করতে পারেন না। দীর্ঘদিন ধরে পাওনা টাকা আদায়ে নানা পদ্ধতি অবলম্বন করলেও কোনোরকম সমাধান হয়নি। তিনি বাড়ি বাড়ি গেছেন, থানায় অভিযোগ দিয়েছেন, কিন্তু কোনো ফল হয়নি। শেষ পর্যন্ত তিনি জনসাধারণের নজরে আনার জন্য বাজারে ব্যানার ঝুলিয়ে দেন।
সমাজে প্রতিক্রিয়া
ইনতাজ আলীর এই উদ্যোগের ফলে স্থানীয় মানুষ এবং সামাজিক মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। কেউ এটিকে দেনা আদায়ের অভিনব ও প্রতিবাদী কৌশল হিসেবে দেখছেন, আবার অনেকে আশঙ্কা করছেন এটি সামাজিক বিরোধ বাড়াতে পারে। স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
নান্দাইল থানার ওসি খন্দকার জালাল উদ্দিন মাহবুব বলেন, “পাওনা টাকা না দেওয়া দুঃখজনক, কিন্তু এভাবে প্রকাশ্যে প্রচার করা উচিত নয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
বিশেষজ্ঞ ও আইনগত দিক
আইন বিশেষজ্ঞরা বলেন, পাওনা টাকা আদায়ে এই ধরনের পদ্ধতি কখনো কখনো কার্যকর হতে পারে, তবে সামাজিক ও আইনগত ঝুঁকি থাকে। প্রকাশ্যে ব্যক্তির নাম ও দেনার পরিমাণ উল্লেখ করলে প্রাইভেসি ও মানহানির অভিযোগও উত্থাপিত হতে পারে।
এছাড়া সমাজবিজ্ঞানের দিক থেকে এটি জনসাধারণের নজরে আনা একটি কৌশল, যা সামাজিক চাপের মাধ্যমে দেনাদারদের টাকা ফেরত দেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদে এই পদ্ধতি সামাজিক বিরোধ সৃষ্টি করতে পারে।
পরবর্তী পদক্ষেপ
ইনতাজ আলী জানিয়েছেন, ব্যানার কার্যকর না হলে তিনি মাইক নিয়ে এলাকায় ঘুরবেন এবং আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ বিষয়টি নজরে রেখেছে এবং এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
ময়মনসিংহের এই ঘটনা দেখাচ্ছে, কিভাবে একজন সাধারণ মানুষ অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করে নিজের অধিকার আদায়ে উদ্যোগ নিতে পারেন। যদিও এ ধরনের পদক্ষেপ বিতর্কের সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু তা সমাজের কাছে একটি উদাহরণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদে সামাজিক ও আইনি সীমার মধ্যে এই ধরনের পদক্ষেপ নিলে সমস্যা সমাধানে সহায়ক হতে পারে।
এম আর এম – ১২৬৩,Signalbd.com