ডেঙ্গুতে একদিনে ৬ জনের মৃত্যু

দেশজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণঘাতী এডিস মশাবাহিত রোগে আরও ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন শত শত রোগী। এ নিয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা দেড় শতাধিক ছুঁইছুঁই।
ঘটনার বিস্তারিত
স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৬ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ঢাকায় তিনজন এবং ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় একজন করে মারা গেছেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, একই সময়ে সারা দেশে মোট ৫৮৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় (১৪৪ জন)। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ভর্তি হয়েছেন ১০৩ জন, বরিশাল বিভাগে ১০৯ জন, ঢাকা বিভাগের অন্যান্য জেলায় ১০৪ জন, চট্টগ্রামে ৫৮ জন, রাজশাহীতে ৪৪ জন, ময়মনসিংহে ১২ জন, রংপুরে ১০ জন এবং সিলেটে ২ জন।
এ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজার ৬৬২ জনে।
বাংলাদেশে মৌসুমি রোগ হিসেবে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নতুন নয়। প্রতি বছর বর্ষাকালে এডিস মশার বিস্তার বাড়লে ডেঙ্গুর প্রকোপও বৃদ্ধি পায়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।
২০১৯ সালে ডেঙ্গু সর্বোচ্চ ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। তখন মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছিল শতাধিক। এরপর থেকে প্রতিবছরই রোগটি নতুন করে ফিরে আসছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি মোকাবিলা কঠিন হয়ে পড়ছে।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
ডেঙ্গুতে প্রতিদিনের মৃত্যু ও সংক্রমণের খবর সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীদের ভিড় বাড়তে থাকায় শয্যা সংকট দেখা দিয়েছে।
ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক জানান, “প্রতিদিন নতুন রোগীর চাপ বাড়ছে। অনেককে আইসিইউতে ভর্তি করতে হচ্ছে। সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।”
পরিসংখ্যান ও তুলনা
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ১৪৫ জন। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ সংখ্যা বেশি।
শুধু ঢাকাতেই আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে। এর বাইরে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগেও আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জলাবদ্ধতা, অপর্যাপ্ত মশকনিধন কার্যক্রম এবং জনসচেতনতার অভাব এ পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলেছে।
বিশেষজ্ঞ মতামত
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে শুধু চিকিৎসা নয়, প্রতিরোধমূলক কার্যক্রমেও গুরুত্ব দিতে হবে।
ইপিডেমিওলজিস্ট ডা. নাসির উদ্দিন বলেন, “মশা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ না নিলে মৃত্যু ও সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে। প্রতিটি বাড়ি, অফিস ও বিদ্যালয়কে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সরকারকে পাশাপাশি স্থানীয় কর্তৃপক্ষকেও সক্রিয় হতে হবে।”
পরিশেষে
একদিনে ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু জনমনে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না আনলে তা ভয়াবহ বিপর্যয়ে রূপ নিতে পারে।
এখন প্রশ্ন হলো—সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে কি বাংলাদেশ আবারও ডেঙ্গুর ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পাবে, নাকি এই সংকট আরও দীর্ঘায়িত হবে?
এম আর এম – ১২৮৯,Signalbd.com