বাংলাদেশ

জাকসু নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা ছাত্রদলের

২০২৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল। এই সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন জিএস পদপ্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখী।

ছাত্রদলের অভিযোগের মূল বিষয়সমূহ

১. ভোটার তালিকায় ছবি না থাকা

ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখী অভিযোগ করেন যে, ভোটার তালিকায় ভোটারদের ছবি সংযুক্ত করা হয়নি। এতে ভোটার শনাক্তকরণে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে, যা নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

২. তাজউদ্দীন হলে প্রবেশে বাধা

তিনি আরও জানান, তাজউদ্দীন হলে তাদের প্যানেলের সদস্যদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ও প্রচারণা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

৩. মব সৃষ্টির অভিযোগ

২১ নম্বর হলে মব সৃষ্টির মাধ্যমে ভোটারদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বৈশাখী। এমন পরিস্থিতি নির্বাচনের নিরপেক্ষতা ও সুষ্ঠুতা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করেছে।

৪. স্বতন্ত্র প্রার্থীর ওপর হামলা

জাহানারা ইমাম হলে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এমন ঘটনা নির্বাচনের পরিবেশকে অস্থিতিশীল করেছে।

৫. জামায়াতের সরবরাহকৃত ওএমআর মেশিন ব্যবহার

বৈশাখী অভিযোগ করেন যে, জামায়াতের সরবরাহকৃত ওএমআর মেশিন ব্যবহার করা হয়েছে, যা তাদের প্যানেলের পছন্দ ছিল না। এতে ভোট গণনায় পক্ষপাতিত্বের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

৬. শিবিরকে অতিরিক্ত ব্যালট বিতরণের অভিযোগ

তিনি আরও জানান, ১০ থেকে ২০ শতাংশ অতিরিক্ত ব্যালট শিবিরকে বিতরণ করা হয়েছে, যা নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

৭. ভোটারদের একাধিকবার ভোট দেওয়া

মেয়েদের হলে একই ভোটার একাধিকবার ভোট প্রদান করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন বৈশাখী। এমন অনিয়ম নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করেছে।

৮. শিবিরপন্থি সাংবাদিকদের পক্ষপাতিত্ব

তিনি অভিযোগ করেন যে, শিবিরপন্থি সাংবাদিকরা ছাত্রদলের প্রার্থীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন এবং পক্ষপাতিত্বমূলক সংবাদ পরিবেশন করেছেন।

৯. নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা

বৈশাখী জানান, নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং তারা অনিয়মের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

ছাত্রদলের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপট

ছাত্রদলের এই সিদ্ধান্তের পেছনে দীর্ঘদিনের ছাত্র রাজনীতির প্রেক্ষাপট রয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন কারণে তাদের প্রভাব কমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে তারা নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিল।

তবে নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত তাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি তাদের রাজনৈতিক কৌশল ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ওপর প্রভাব ফেলবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এখনও ছাত্রদলের অভিযোগের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে সাধারণভাবে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্বাচনের সুষ্ঠুতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে থাকে।

ছাত্র রাজনীতির ভবিষ্যৎ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে এই নির্বাচনের পরবর্তী ঘটনাবলীর ওপর। যদি ছাত্রদলের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তবে ছাত্র রাজনীতির প্রতি শিক্ষার্থীদের আস্থা বৃদ্ধি পাবে। অন্যথায়, ছাত্র রাজনীতির প্রতি শিক্ষার্থীদের অনীহা বাড়তে পারে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জাকসু নির্বাচন বর্জনের ঘটনা ছাত্র রাজনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এটি নির্বাচনের সুষ্ঠুতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে। ভবিষ্যতে ছাত্র রাজনীতির উন্নয়ন ও গতিশীলতার জন্য সকল পক্ষের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

MAH – 12763,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button