রাশিয়া-ইউক্রেনের বাফার জোনে শান্তিরক্ষায় আগ্রহী বাংলাদেশ: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

যুদ্ধরত রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সম্ভাব্য শান্তিচুক্তি হলে, উভয় দেশের বাফার জোনে জাতিসংঘের আওতায় শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
বাংলাদেশ শান্তিরক্ষায় প্রস্তুত
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মো. তৌহিদ হোসেন জানান, “এ বিষয়ে এখনই বিশদ কিছু বলার সুযোগ নেই। আশা করি, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠিত হবে। এরপর জাতিসংঘ নিশ্চয়ই কোনো ভূমিকা নেবে। আমাদের দেশের শান্তিরক্ষা অভিজ্ঞতা রয়েছে। যদি কোনো ধরনের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম সেখানে হয়, আমরা অবশ্যই অংশগ্রহণ করতে চাই।”
উল্লেখযোগ্য যে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। বিশেষ করে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে বাংলাদেশের সেনারা জাতিসংঘের অধীনে দায়িত্ব পালন করেছেন।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট ও বাফার জোনের গুরুত্ব
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের মধ্যে বাফার জোন মূলত দু’দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় স্থির করার পরিকল্পিত শান্তি অঞ্চল। এই জোনে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশ্য হলো সহিংসতা হ্রাস করা, স্থানীয় নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং মানবিক সহায়তা পৌঁছানো।
বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো মনে করায়, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা অভিজ্ঞতা এবং সেনাদের প্রশিক্ষণ বিশ্বমানের। এ কারণে জাতিসংঘের এ ধরনের মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ইতিবাচক বার্তা দেবে।
বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অভিজ্ঞতা
বাংলাদেশের সেনারা পূর্বে কঙ্গো, সুদান ও লেবাননে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের দক্ষতা, প্রশিক্ষণ ও মানসম্মত কাজের কারণে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে একটি বিশ্বস্ত অংশীদার হিসেবে পরিচিত।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের শান্তিরক্ষায় অভিজ্ঞতা রয়েছে। যদি রাশিয়া-ইউক্রেনের বাফার জোনে কোনো শান্তিরক্ষা কার্যক্রম হয়, আমরা অবশ্যই অংশ নিতে প্রস্তুত। এটি আমাদের আন্তর্জাতিক দায়িত্ব ও সম্মানের অংশ।”
নেপাল ও ভারত নিয়ে সাম্প্রতিক হালনাগাদ
অপরদিকে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক সম্পর্কেও সংবাদদাতাদের তিনি জানান, এখনও এ বিষয়ে কোনো হালনাগাদ তথ্য হাতে পাননি।
তাছাড়া, নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে আটকে পড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন যে তারা নিরাপদে রয়েছেন। ঢাকা-কাঠমান্ডু রুটে ফ্লাইট চালু হলে তারা দেশে ফিরতে পারবেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষক মন্তব্য
বিশ্ব রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য হবে। এটি বাংলাদেশের কূটনৈতিক সক্ষমতা ও আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতা প্রদর্শন করবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, “বাংলাদেশ যদি জাতিসংঘের আওতায় শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেয়, তা শুধু আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিই নয়, দেশের অভ্যন্তরীণ সামরিক প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতির সক্ষমতাকেও প্রমাণ করবে।”
ভবিষ্যতের প্রভাব
বাংলাদেশের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাফার জোনে শান্তি স্থাপন সহজতর হতে পারে। এছাড়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে দেশের কূটনৈতিক মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, দেশের পক্ষ থেকে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেওয়া কেবল দায়িত্ব নয়, এটি আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
পরিশেষে
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের বাফার জোনে বাংলাদেশের সম্ভাব্য অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক কূটনীতির দিক থেকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। দেশের শান্তিরক্ষা অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষিত সেনা ও জাতিসংঘের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক এটিকে কার্যকর ও বিশ্বাসযোগ্য অংশীদার হিসেবে প্রমাণ করবে। তবে শান্তি স্থাপন এবং বাংলাদেশি অংশগ্রহণ কার্যকর করতে রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি অপরিহার্য।
এম আর এম – ১২৭৯,Signalbd.com