বাংলাদেশ

ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের মেয়াদ নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত

সরকারি ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য প্রশিক্ষণের কাঠামোতে বড় পরিবর্তন এনেছে জাতীয় প্রশিক্ষণ কাউন্সিল। এখন থেকে কর্মকর্তাদের ছয় মাসের পরিবর্তে চার মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর মধ্যে তিন মাস প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে এবং এক মাস মাঠপর্যায়ে গ্রামীণ সংযুক্তি ও বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

জাতীয় প্রশিক্ষণ কাউন্সিলের নবম সভায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় কর্মকর্তাদের দক্ষতা উন্নয়ন, উচ্চশিক্ষার সুযোগ, প্রশিক্ষণ কাঠামোর মানোন্নয়ন এবং মূল্যায়ন পদ্ধতি সম্পর্কেও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

প্রশিক্ষণের নতুন কাঠামো

কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চার মাসব্যাপী প্রশিক্ষণে কর্মকর্তারা প্রথমে তিন মাস শ্রেণিকক্ষে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করবেন। পরে তারা এক মাস মাঠপর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞতা নেবেন। গ্রামে সংযুক্তির মাধ্যমে কর্মকর্তারা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা, স্থানীয় প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ এবং সমাজের মূল কাঠামো সম্পর্কে প্রত্যক্ষ ধারণা পাবেন।

এছাড়া মাঠপর্যায়ের এই অভিজ্ঞতা ভবিষ্যৎ প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে সাহায্য করবে বলে ধারণা করছে সংশ্লিষ্টরা।

পূর্বের কাঠামোর তুলনায় পরিবর্তন

এর আগে ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য ছয় মাসের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু ছিল। কিন্তু সেই কাঠামো দীর্ঘ হওয়ায় প্রশাসনিক কাজ শুরু করতে কর্মকর্তাদের অপেক্ষা করতে হতো। নতুন কাঠামোতে সময় কমলেও গুণগত মান রক্ষা করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ মনে করছে, প্রশিক্ষণের মেয়াদ কমানো হলেও এতে শেখার কার্যকারিতা বাড়বে এবং কর্মকর্তারা দ্রুত দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারবেন।

উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি

সভায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্সে ভর্তির বয়সসীমা ৪৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ৪৭ বছর করা হয়েছে। পাশাপাশি, পিএইচডি অধ্যয়নরত কর্মকর্তাদের প্রতি বছর তত্ত্বাবধায়কের কাছ থেকে অগ্রগতি রিপোর্ট জমা দিতে হবে। তা না হলে বেতন বন্ধ রাখার বিধানও রাখা হয়েছে।

এছাড়া, কর্মকর্তারা আংশিক বৃত্তি পেলেও প্রেষণ অনুমোদন দেওয়া যাবে। এতে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা ও গবেষণায় অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

দক্ষতা নবায়ন প্রশিক্ষণ

সঞ্জীবনী প্রশিক্ষণের নাম পরিবর্তন করে এখন থেকে এটি ‘দক্ষতা নবায়ন প্রশিক্ষণ’ নামে পরিচালিত হবে। এই প্রশিক্ষণে কর্মকর্তাদের আধুনিক প্রশাসনিক কৌশল, নৈতিকতা ও দুর্নীতি প্রতিরোধের মনোভাব গড়ে তোলার ওপর জোর দেওয়া হবে। মাঠপর্যায়ের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এই প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হবে।

মূল্যায়ন ও গবেষণা ব্যবস্থা

সভায় কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মানোন্নয়নের জন্য গবেষণা, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এজন্য একটি নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “সরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর কার্যক্রমের মানোন্নয়ন করতে হবে। প্রতিটি কেন্দ্রের প্রশিক্ষণের ধরণ ও মান মূল্যায়ন করে র‍্যাংকিং করতে হবে।”

তিনি আরও জানান, একটি স্বাধীন ইউনিট গঠন করা হবে যারা গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে। বিশেষ করে বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তথ্যও এই ইউনিটে সংরক্ষিত থাকবে।

সংশ্লিষ্টদের মতামত ও প্রতিক্রিয়া

অংশগ্রহণকারীদের মতে, নতুন কাঠামো কর্মকর্তাদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দ্রুত দায়িত্ব পালনের সুযোগ তৈরি করবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা কর্মকর্তাদের প্রশাসনিক দক্ষতায় বাস্তবিক পরিবর্তন আনবে।

অন্যদিকে, কিছু মহল মনে করছে প্রশিক্ষণের মেয়াদ কমিয়ে দিলে শেখার গভীরতা কিছুটা কমে যেতে পারে। তবে কাউন্সিলের দাবি, নতুন কারিকুলাম এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে সময় কম হলেও কার্যকারিতা অক্ষুণ্ণ থাকে।

পরিশেষে

ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণে নতুন কাঠামো বাংলাদেশের প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় একটি বড় পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রশিক্ষণের মেয়াদ কমলেও মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এটি আরও বাস্তবমুখী হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, এই পরিবর্তিত কাঠামো বাস্তবে কতটা কার্যকর হবে এবং কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে কতটা ভূমিকা রাখবে? সময়ই তার উত্তর দেবে।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button