বিশ্ব

ভারতের ১২টি ড্রোন অকার্যকর করল পাকিস্তান, সীমান্তে উত্তেজনা তুঙ্গে

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনার মধ্যে ১২টি ড্রোন অকার্যকর করার দাবি পাকিস্তানের

সীমান্তে ভয়াবহ উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তান দাবি করেছে, ভারতের পাঠানো ১২টি ড্রোন তারা অকার্যকর করে দিয়েছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, এসব ড্রোন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রবেশ করেছিল এবং কয়েকটি হামলাও চালিয়েছে। এসব অভিযানে এক বেসামরিক নাগরিক নিহত ও চার সেনা সদস্য আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে ইসলামাবাদ।

এই ঘটনার মধ্য দিয়ে দুই পারমাণবিক প্রতিবেশী দেশের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা আরও বাড়লো, যা গত দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সামরিক সংঘাতে রূপ নিচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

আজাদ কাশ্মীরে ড্রোন হামলা, প্রাণ গেল বেসামরিক নাগরিকের

পাক সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী বলেন, “গতকাল রাতের ড্রোন হামলা ছিল ভারতের আরেকটি আগ্রাসন। মিয়ানো এলাকায় একটি ড্রোন বিস্ফোরণে একজন বেসামরিক নাগরিক শহীদ হয়েছেন।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালাচ্ছি এবং এখন পর্যন্ত ১২টি ভারতীয় ড্রোন অকার্যকর করতে সক্ষম হয়েছি। আরও কিছু ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে আজ সকালের দিকে।”

লাহোরে দুটি ড্রোন ভূপাতিত, বিস্ফোরণে আতঙ্ক

এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে লাহোরের ওয়ালটন রোড এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে শহর। পরে পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী জানায়, ওই এলাকায় দুটি ভারতীয় ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। সামা টিভি ও আল-জাজিরার খবরে জানানো হয়, লাহোর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহযোগিতায় ড্রোন দুটি ধ্বংস করা হয়।

ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলে নিরাপত্তা বাহিনী, চালানো হয় তল্লাশি অভিযান। বিস্ফোরণের কারণে সেখানকার নাগরিকদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পাঞ্জাবের সীমান্তবর্তী হাসপাতালে জারি করা হয়েছে সতর্কতা। তবে এখনো পর্যন্ত পাঞ্জাব প্রাদেশিক সরকার কিংবা কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি।

ভারতীয় হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র

এই ঘটনার ঠিক আগের দিন মঙ্গলবার রাতে ভারতীয় বিমান পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের নীলাম-ঝিলাম জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে হামলা চালায়। প্রকল্পটির ইনটেক স্ট্রাকচার ও হাইড্রোলিক ইউনিট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুজাফফরাবাদের ডেপুটি কমিশনার মুদাসসির ফারুক।

ভারত দাবি করছে, তারা পাকিস্তানের সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার জবাব হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে পাকিস্তান এ হামলার দায় অস্বীকার করে বলেছে, তারা এর জবাব দেবে এবং ভারতের দাবি ‘ভুল তথ্য’।

যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির শঙ্কা, হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে

সীমান্তে ক্রমাগত গোলাগুলি ও ড্রোন হামলায় পাকিস্তানের ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন বলে ইসলামাবাদ দাবি করেছে। ভারতও জানিয়েছে, তাদের ১৩ জন নাগরিক নিহত এবং আরও ৪৩ জন আহত হয়েছেন।

ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় ব্ল্যাকআউট মহড়া চালানো হয়েছে। এমনকি শিখদের পবিত্র স্থান অমৃতসর শহরেও অন্ধকার করে রাখা হয়। অন্যদিকে পাকিস্তানের লাহোর, সিয়ালকোটসহ কয়েকটি সীমান্তবর্তী শহরে হাসপাতাল, সিভিল ডিফেন্স ও জরুরি পরিষেবাগুলো উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে।

দুই দেশের পাল্টাপাল্টি অবস্থান

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, “আমরা উত্তেজনা কমাতে প্রস্তুত, কিন্তু যদি ভারতের হামলার জবাব দিতে হয়, সেটা দিতেই হবে।” ভারতের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, যদি পাকিস্তান প্রতিক্রিয়া জানায়, তাহলে তার উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।

এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই দেশকে আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির আহ্বান জানিয়েছেন এবং প্রয়োজনে মধ্যস্থতা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

দীর্ঘদিনের বৈরিতা, অর্থনীতি পড়েছে চাপে

ভারত ও পাকিস্তান ১৯৪৭ সালের পর থেকে তিনবার যুদ্ধে জড়িয়েছে, যার মধ্যে দুবারই ছিল কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে। এবারও সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু কাশ্মীর ও আজাদ কাশ্মীর অঞ্চল।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধাবস্থা দীর্ঘ হলে পাকিস্তানের অর্থনীতির ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। দেশটি এখনো সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংকট থেকে পুরোপুরি মুক্ত হয়নি। ডলারের বিপরীতে রুপি দুর্বল, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কম, এবং মূল্যস্ফীতি রেকর্ড পর্যায়ে।

এক চুলের আগুনে দাঁড়িয়ে উপমহাদেশ

বর্তমান পরিস্থিতি স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে, ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই একটি অস্থির, বিপজ্জনক মোড়ের দিকে এগোচ্ছে। ড্রোন যুদ্ধ, বিমান হামলা এবং সীমান্তে গোলাগুলি—সবই ইঙ্গিত করছে দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে স্থায়ী উত্তেজনার।

আন্তর্জাতিক মহলের নজর এখন উপমহাদেশের দিকে। কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা ও শান্তিপূর্ণ সমাধান ছাড়া যেকোনো সময় পরিস্থিতি বড় ধরনের যুদ্ধের দিকে গড়াতে পারে।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button