বাংলাদেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ: ৬ দফা দাবি, ৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ: ৬ দফা দাবি, ৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও এর অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ৬ দফা দাবি জানিয়েছেন। তারা এই দাবিগুলো পূরণের জন্য সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় সংবাদ সম্মেলনে চার ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন। দাবি মানা না হলে কঠোর কর্মসূচি গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

সংঘর্ষের পটভূমি

রোববার (২৬ জানুয়ারি) রাত ১১টার দিকে ঢাবি ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নীলক্ষেত মোড় সংলগ্ন মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে সংঘর্ষ শুরু হয়। দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার এ ঘটনায় উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. ফারুক জানান, সংঘর্ষে আহত ২৭ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন, যাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ভর্তি রাখা হয়েছে।

সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবি

১. ঢাবি প্রশাসনের ক্ষমা প্রার্থনা ও প্রো-ভিসির পদত্যাগ: ঢাবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের দায় স্বীকার করে ঢাবি প্রশাসনকে ক্ষমা চাইতে হবে এবং প্রো-ভিসি অধ্যাপক মামুন আহমেদকে পদত্যাগ করতে হবে।

২. পুলিশি হামলার তদন্ত ও ব্যবস্থা: ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী রাকিবকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলাসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীদের ওপর নিউমার্কেট থানা পুলিশের হামলার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট এসি, ওসি ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

৩. নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের বিচার: ঢাবি শিক্ষার্থীদের দ্বারা ইডেন কলেজ ও বদরুন্নেসা কলেজসহ সাত কলেজের নারী শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও অশালীন অঙ্গভঙ্গির সঙ্গে জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

৪. স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা প্রণয়ন: ঢাবির সঙ্গে সাত কলেজের একাডেমিক ও প্রশাসনিক সম্পর্কের চূড়ান্ত অবসান ঘটিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে।

৫. উচ্চ পর্যায়ের মিটিংয়ের মাধ্যমে সমাধান: উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধানের জন্য প্রধান উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা, শিক্ষার্থী উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, ইউজিসি সদস্য এবং ঢাবি ভিসির সমন্বয়ে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে তাৎক্ষণিক উচ্চ পর্যায়ের মিটিংয়ের মাধ্যমে এই ঘটনার সমাধান করতে হবে।

৬. সিটি করপোরেশনের রাস্তা উন্মুক্তকরণ: ঢাবি সংশ্লিষ্ট এলাকায় সিটি করপোরেশনের রাস্তা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলন ও পরবর্তী পদক্ষেপ

সোমবার দুপুর ১২টায় সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন এবং নিজেদের অবস্থান নিয়ে ব্রিফ করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তারা উল্লেখিত ৬ দফা দাবি তুলে ধরেন এবং বিকেল ৪টার মধ্যে এসব দাবি পূরণের আলটিমেটাম দেন। তারা জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবি মানা না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

সাম্প্রতিক সংঘর্ষের কারণ ও প্রতিক্রিয়া

ঢাবি ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের কারণ সম্পর্কে জানা গেছে, ঢাবি শিক্ষার্থীরা সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছিলেন। এরই মধ্যে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নিলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায় এবং সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিগুলো উপস্থাপন করেন এবং দ্রুত সমাধানের আহ্বান জানান। তারা উল্লেখ করেন, যদি তাদের দাবি পূরণ না করা হয়, তবে তারা আরও কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করবেন।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া

এখনও পর্যন্ত ঢাবি প্রশাসন বা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্যাম্পাস এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

ঢাবি ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও পরবর্তী দাবিসমূহ বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার কিছু মৌলিক সমস্যার প্রতিফলন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ দূর করা এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা।

ঢাবি ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ: সর্বশেষ আপডেট

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button