বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্র ফেরত আরও ৩৯ বাংলাদেশি: অবৈধ অভিবাসনের ছাঁটাই অব্যাহত

২ আগস্ট সকালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটি ইমার্জেন্সি বিমান (C-17) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানে ছিলেন ৩৯ জন বাংলাদেশি, যার মধ্যে ১ জন নারী। তাদের অবৈধ অবস্থানের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত আনা হয়। ফেরত আসা অনেকেই অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘ ফ্লাইটের সময় তাদের হাতে হ্যান্ডকাফ পরানো হয়, যা মানবিক আচরণের পরিপন্থী।

মাইগ্রেশন বিশেষজ্ঞদের মতে, অধিকাংশ ফেরত আসা অভিবাসী তাদের বাড়ি বিক্রি করে বা লাখ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছান। দেশে ফিরে কঠোর বাস্তবতার মুখোমুখি হন তারা। আশ্রয় আবেদন ও ন্যায়বিচারের সুযোগ প্রায়ই বন্ধ থাকে। ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিবাসন নীতি ও ফেরত প্রক্রিয়া বাংলাদেশের অভিবাসন নীতি, মানবাধিকার ও কূটনৈতিক সম্পর্কের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

১. বিমানবন্দরে অবতরণ ও তথ্যসূত্র

২ আগস্ট সকাল ৬:৪৫ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটি মার্কিন সামরিক বিমান (C-17) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানে ছিলেন ৩৯ জন বাংলাদেশি, যার মধ্যে ১ জন নারী। তারা অবৈধ অভিবাসনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত আনা হয়।

২. অভিযোগ: হ্যান্ডকাফে রাখা ও মানবতাবিরোধী আচরণ

ফেরত আসা অনেকেই অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘ ফ্লাইটের সময় তাদের হাতে হ্যান্ডকাফ পরানো হয়। তারা দাবি করেন, তারা কোনো অপরাধী নন, শুধু আশ্রয় খুঁজছিলেন। এই ধরনের আচরণ মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

৩. অভিবাসীদের আর্থিক বোঝা এবং ভ্রমণ পথ

BRAC মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সহকারী পরিচালক শরিফুল হাসান জানান, অধিকাংশ অভিবাসী তাদের বাড়ি বিক্রি করে বা ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছান। অনেকেই মেক্সিকো ও দক্ষিণ আমেরিকার রুট ব্যবহার করে অবৈধভাবে প্রবেশ করেন।

৪. আশ্রয় আবেদন ও প্রত্যাখ্যান

যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর পর অনেকেই আশ্রয় (asylum) আবেদন করেন। তবে আদালত ও ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে দেশে ফিরে আসেন।

৫. যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ও প্রেক্ষাপট

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদের শুরু থেকেই অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৩৪ ও ৩১ জন বাংলাদেশি ফেরত আসেন। এই দফায় ফেরত আসা ৩৯ জনের সঙ্গে মিলিয়ে মোট ফেরত আসা বাংলাদেশির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫৭ জনের বেশি।

৬. কূটনৈতিক ও মানবাধিকার দাবি

ঢাকা থেকে এত দূরে অবৈধ অভিবাসীদের মানবিক আচরণ ও হ্যান্ডক্যাফের মতো প্রক্রিয়া নিয়ে সমালোচনা উঠেছে। তবে কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সরকার এই প্রক্রিয়া মেনে নিয়েছে যাতে কোনো কূটনৈতিক সমস্যা না হয়।

৭. সম্প্রদায় ও আইনগত প্রতিক্রিয়া

প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। যারা বৈধ নন, তারা আতঙ্কে শহরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকছেন। প্রবাসী আইনজীবী ও কর্মীরা বলছেন, বাংলাদেশি সম্প্রদায় এখনও পর্যাপ্ত আইনি সহায়তা পাচ্ছে না।

অর্থনৈতিক বোঝা ও পথ

অধিকাংশ ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছান। তাদের উদ্ধার ও সহায়তার জন্য BRAC-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে, তবে সরকারি সহযোগিতা ও ফেরত প্রক্রিয়ার উন্নতি প্রয়োজন।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের আশঙ্কা

হ্যান্ডকাফে রাখা ও অপরাধীর মতো আচরণ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতির পরিপন্থী। সরকার ও সুশীল সমাজের উচিত এই বিষয়ে নজর দেওয়া।

কূটনৈতিক প্রস্তুতি

ফেরত প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ সরকারের অগ্রাধিকার রয়েছে, তবে ভবিষ্যতে বিশেষ নীতি ও নিরাপদ প্রতিস্থাপন পরিকল্পনা প্রয়োজন।

আইনগত সহায়তা ও অবহিতকরণ

প্রবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে তথ্য ও আইনি সহায়তা কার্যকরভাবে পৌঁছানো জরুরি। অভিবাসীদের জন্য পথপ্রদর্শক ও সহায়তাকারী সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত আসা ৩৯ জন বাংলাদেশির ঘটনা শুধু ব্যক্তিগত দুঃখ নয়, এটি বৈশ্বিক অভিবাসন, মানবাধিকার, আর্থিক ঝুঁকি ও কূটনৈতিক নীতির মধ্যে টানাপোড়েনের প্রতিফলন। সিগন্যালবিডি’র পাঠকদের জন্য এটি শুধু সংবাদ নয়, সচেতনতা ও সমাধানের আহ্বান। দেশের অভিবাসন নীতি পুনর্বিবেচনা ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবি।

MAH – 12643,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button