৩০০ আসনের সীমানা চূড়ান্ত করে ইসির গেজেট: ১টি বাড়লো গাজীপুরে, কমলো বাগেরহাটে

নির্বাচন কমিশন (ইসি) দেশের ৩০০ আসনের সংসদীয় সীমানা পুনঃনির্ধারণ করে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করেছে। নতুন এই গেজেটে গাজীপুরে একটি আসন বেড়েছে এবং বাগেরহাটে একটি আসন কমেছে। গাজীপুরে যুক্ত হয়েছে গাজীপুর-৬ আসন, আর বাগেরহাটের বাগেরহাট-৪ আসন বাদ দেওয়া হয়েছে।
সিদ্ধান্তের বিস্তারিত
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের ঘোষণায় বলা হয়, ভোটার সংখ্যা, জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং প্রশাসনিক সুবিধা বিবেচনায় এনে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।
গাজীপুরে নতুন একটি আসন যুক্ত হওয়ায় এখন সেখানে মোট আসন হলো ৬টি। অন্যদিকে বাগেরহাটে একটি আসন কমে দাঁড়ালো ৩টিতে। বাগেরহাট-৪ আসনটি বাদ দেওয়া হয়েছে এবং এর অন্তর্ভুক্ত মোড়লগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলা বাগেরহাট-৩ আসনে যোগ করা হয়েছে।
প্রতি সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটার সংখ্যা এবং জনসংখ্যার ভারসাম্য রাখতে আসন সীমানা নির্ধারণ করে ইসি। সংবিধান অনুযায়ী, প্রতি আসনে প্রায় সমসংখ্যক ভোটার থাকা উচিত। এজন্য জনসংখ্যা বা ভোটার বাড়া-কমার সঙ্গে সঙ্গে আসনের সীমানা পরিবর্তন করতে হয়।
এর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে আসন পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছিল। তখনও একাধিক আসনের সীমানা পরিবর্তন হয়েছিল। এবার গাজীপুরে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে একটি নতুন আসন যুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। অন্যদিকে বাগেরহাটে জনসংখ্যার তুলনায় আসন সংখ্যা কমানো হয়েছে।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
গাজীপুরে নতুন আসন যুক্ত হওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলো নতুনভাবে নির্বাচনী কৌশল সাজাতে বাধ্য হবে। বিশেষ করে বড় দলগুলোর প্রার্থীদের মধ্যে নতুন প্রতিযোগিতা তৈরি হবে। স্থানীয় নেতারা মনে করছেন, নতুন আসন তৈরির ফলে রাজনৈতিক সমীকরণে পরিবর্তন আসবে।
অন্যদিকে বাগেরহাটে একটি আসন বাদ যাওয়ায় স্থানীয় রাজনীতিতে চাপ তৈরি হতে পারে। কারণ এক আসনের সঙ্গে দুটি উপজেলা যোগ হওয়ায় প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও জটিল হতে পারে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এতে স্থানীয়ভাবে অসন্তোষ দেখা দিতে পারে।
পরিসংখ্যান ও তুলনা
গাজীপুর বাংলাদেশের দ্রুত বর্ধনশীল জেলা। শিল্প এলাকা, অভ্যন্তরীণ অভিবাসন এবং নগরায়ণের কারণে এখানকার জনসংখ্যা বিগত এক দশকে অনেকগুণ বেড়েছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গাজীপুরে ভোটার সংখ্যা কয়েক মিলিয়নের বেশি হয়ে গেছে, যা নতুন আসন তৈরির যৌক্তিকতা নিশ্চিত করে।
অন্যদিকে বাগেরহাট একটি তুলনামূলক কম জনবসতিপূর্ণ জেলা। ভোটার ঘনত্ব এবং জনসংখ্যার অনুপাতে সেখানে একটি আসন কমানো হয়েছে। ইসি জানিয়েছে, এটি আসনগুলোর মধ্যে ভারসাম্য আনতে সহায়ক হবে।
বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত
নির্বাচনী বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আসন পুনঃনির্ধারণ একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া হলেও তা রাজনৈতিকভাবে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। গাজীপুরের নতুন আসন রাজধানীর পাশের এলাকার ভোট রাজনীতিকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলবে।
তবে সমালোচকরা বলছেন, আসন পুনঃনির্ধারণের ক্ষেত্রে জনগণের মতামত যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বিশেষ করে বাদ পড়া আসনগুলোর এলাকায় মানুষের মাঝে অসন্তোষ তৈরি হতে পারে। তাদের মতে, ইসি যদি স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে আরও খোলামেলা আলোচনা করত, তবে স্বচ্ছতা বাড়ত।
একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেছেন, “আসন সীমানা পরিবর্তন সবসময়ই সংবেদনশীল বিষয়। এটি একদিকে যেমন গণতান্ত্রিক ভারসাম্য নিশ্চিত করে, অন্যদিকে স্থানীয় রাজনীতিতে টানাপোড়েনও সৃষ্টি করে।”
পরিশেষে
৩০০ আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ করে প্রকাশিত গেজেট বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। গাজীপুরে নতুন আসন যুক্ত হওয়া রাজধানীর রাজনীতিকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করবে, আর বাগেরহাটে আসন বাদ যাওয়ায় স্থানীয় সমীকরণে বড় পরিবর্তন আসতে পারে।
আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন সব দলের নজর থাকবে নতুন আসনভিত্তিক প্রার্থীতার ওপর। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—এই সীমানা পরিবর্তন রাজনৈতিক মাঠে কতটা স্বচ্ছতা ও ভারসাম্য আনবে? তার উত্তর দেবে আসন্ন সময়।
এম আর এম – ১১৮১, Signalbd.com