সব রেকর্ড ভেঙে দেশের ইতিহাসে স্বর্ণের সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ

দেশের স্বর্ণ বাজারে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। টানা চতুর্থবার দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি করে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের এক ভরি মূল্য সর্বোচ্চ ১ লাখ ৭৮ হাজার ৮৩২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উচ্চতম দর দেশের স্বর্ণের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে।
দাম বৃদ্ধির বিস্তারিত
বাজুসের বুধবার রাতে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ২২ ক্যারেট স্বর্ণের প্রতি ভরি দাম ৩ হাজার ৪৪ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৮৩২ টাকা হয়েছে। নতুন এই দর বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) থেকে কার্যকর হবে। এর আগে ১ সেপ্টেম্বর ২২ ক্যারেট স্বর্ণের প্রতি ভরি দাম ১ লাখ ৭৫ হাজার ৭৮৮ টাকা ছিল।
নতুন দাম অনুযায়ী, ২১ ক্যারেট স্বর্ণ প্রতি ভরি ১ লাখ ৭০ হাজার ৭০৩ টাকা, ১৮ ক্যারেট স্বর্ণ ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩১৩ টাকা, এবং সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণ প্রতি ভরি ১ লাখ ২১ হাজার ১৬৬ টাকায় বিক্রি হবে।
চলতি বছরে বাজুস দেশের বাজারে মোট ৪৯ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছে। এর মধ্যে ৩৩ বার দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং ১৬ বার দাম কমানো হয়েছে। গত বছর দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছিল ৬২ বার, যেখানে ৩৫ বার দাম বাড়ানো হয়েছিল এবং ২৭ বার কমানো হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার হার ওঠানামা এবং দেশীয় স্বর্ণের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে এমন দাম বৃদ্ধির ঘটনা ঘটেছে।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির কারণে গহনা ব্যবসায়ীরা আপেক্ষিক স্বস্তি বোধ করছেন। তবে সাধারণ ক্রেতাদের জন্য এই দাম বৃদ্ধি চাপ তৈরি করতে পারে। ক্রেতারা এখন স্বর্ণ কেনার ক্ষেত্রে আরও সাবধান হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের দাম বৃদ্ধির প্রভাব স্বর্ণের চাহিদা ও বাজারের গতিশীলতার ওপর প্রতিফলিত হতে পারে।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ
স্বর্ণ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গৃহস্থালী বিনিয়োগ এবং বৈদেশিক মুদ্রার হিসাব-নিকাশে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি প্রভাব ফেলতে পারে। দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির ফলে বিনিয়োগকারীদের জন্য স্বর্ণ এখন আরও দামী হয়ে গেছে। এছাড়া, বিবিধ উৎস থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং আন্তর্জাতিক বাজারের স্বর্ণের দামের ওঠানামাও দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
আন্তর্জাতিক স্বর্ণ বাজারেও সাম্প্রতিক সময়ে দাম বৃদ্ধি দেখা গেছে। ইউরোপ এবং এশিয়ার বাজারে স্বর্ণের দাম সামান্য ঊর্ধ্বমুখী থাকায়, দেশের বাজারে স্বর্ণের দামও প্রভাবিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব ছাড়াও দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের মূল্য নির্ধারণ নীতিই মূলত স্বর্ণের দাম বাড়ানোর কারণ।
ভবিষ্যতের প্রভাব
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, স্বর্ণের দাম এই ধারা অব্যাহত থাকলে ক্রেতাদের পক্ষে স্বর্ণ ক্রয় কঠিন হয়ে যেতে পারে। তবে বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণকে নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবেই ধরে রাখবেন। বাজার বিশ্লেষকরা পরামর্শ দিচ্ছেন, ক্রেতাদের বাজারের ওঠানামা খেয়াল রেখে বিনিয়োগ ও ক্রয় সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
পরিশেষে
দেশের বাজারে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের এক ভরি দাম ১ লাখ ৭৮ হাজার ৮৩২ টাকা পৌঁছানো ইতিহাসে এক নতুন রেকর্ড। আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব, অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং বৈদেশিক মুদ্রার ওঠানামা মিলিয়ে এই দাম বৃদ্ধি হয়েছে। ক্রেতাদের জন্য এটি নতুন চ্যালেঞ্জ, আর ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন সুযোগ।
এম আর এম – ১১৭৪, Signalbd.com