বাংলাদেশ

নুরুল হক নুরের জ্ঞান ফিরেছে, ঢামেকে চিকিৎসাধীন

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, যিনি গতকাল কাকরাইলে সহিংস হামলার ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন, তার জ্ঞান ফিরেছে। তিনি বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন আছেন।

চিকিৎসকদের সর্বশেষ আপডেট

ঢামেক হাসপাতালের আইসিইউতে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নুরুল হক নুরের মাথায় গুরুতর আঘাত রয়েছে এবং তার নাকের হাড় ভেঙে গেছে, যার কারণে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছিল। দীর্ঘ সময় রক্তক্ষরণের পর তা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। আজ সকালে তিনি জ্ঞান ফিরে পান এবং চিকিৎসকের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে কথা বলেছেন।

তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এখনই বলা যাচ্ছে না যে তিনি পুরোপুরি আশঙ্কামুক্ত। চিকিৎসা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টা তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। এই সময়ের মধ্যে তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকলে আশঙ্কামুক্ত ঘোষণা করা হবে।

কাকরাইলে সহিংসতা: কী ঘটেছিল গতকাল?

শুক্রবার (২৯ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গণঅধিকার পরিষদের একটি মিছিল সেখানে পৌঁছালে হঠাৎ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, যৌথবাহিনী হঠাৎ তাদের মিছিলে লাঠিচার্জ চালায়, যার ফলে নুরুল হক নুরসহ দলীয় বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হন। আহতদের মধ্যে অন্তত ১৫ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

অন্যদিকে, জাতীয় পার্টি (জাপা) অভিযোগ করেছে, গণঅধিকার পরিষদের মিছিল থেকে তাদের প্রধান কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়েছে। এই হামলার জের ধরেই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে বলে দাবি তাদের।

দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য

গণঅধিকার পরিষদ বলছে, তারা কাকরাইলে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করছিলেন। কোনো উসকানি ছাড়াই তাদের ওপর হামলা হয়েছে। এর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে জাতীয় পার্টির নেতারা অভিযোগ করেছেন, মিছিলকারীরা হঠাৎ করে তাদের প্রধান কার্যালয়ের সামনে এসে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এতে তাদের অন্তত ১০ জন কর্মী আহত হয়েছেন।

এই দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে।

নুরুল হক নুর কে? তার রাজনৈতিক যাত্রা

নুরুল হক নুর বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে অন্যতম আলোচিত নাম। ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভিপি হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আলোচনায় আসেন তিনি।
এরপর থেকেই তিনি বিভিন্ন সময় সরকারের সমালোচনামূলক বক্তব্য দিয়ে আসছেন এবং গণঅধিকার পরিষদ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলেছেন।

তার রাজনৈতিক জীবনের শুরুটা ছাত্র আন্দোলন থেকে হলেও বর্তমানে তিনি জাতীয় পর্যায়ে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা করছেন।

চিকিৎসা এবং পরবর্তী পরিকল্পনা

নুরুল হক নুরের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার মাথার আঘাত এবং নাকের হাড়ের ভাঙন সারাতে আরও চিকিৎসার প্রয়োজন হবে। সম্ভবত পরবর্তীতে তাকে অস্ত্রোপচারের মুখোমুখি হতে হবে।

গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা চিকিৎসা খরচের পাশাপাশি নুরের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। দলীয় নেতারা হাসপাতালে অবস্থান করছেন এবং সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছেন।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

ঘটনার পর থেকে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো গণঅধিকার পরিষদের ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে
কেউ কেউ বলছেন, এই ঘটনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সহিংসতার নতুন অধ্যায় শুরু হলো, যা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি।

অন্যদিকে সরকারপক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিষয়টি তদন্ত করা হবে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত চলছে এবং সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড়

ফেসবুক, টুইটার এবং ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে #SaveNur এবং #JusticeForNur হ্যাশট্যাগে অসংখ্য পোস্ট শেয়ার করা হচ্ছে।
তার সমর্থকরা বলছেন, এই হামলা উদ্দেশ্যমূলক, এবং এর পেছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বক্তব্য

পুলিশের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষের অভিযোগ নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড থেকেই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে। তবে প্রকৃত কারণ জানতে বিস্তারিত তদন্ত চলছে।

সম্ভাব্য পরবর্তী পদক্ষেপ

১. তদন্ত কমিটি গঠন – স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হতে পারে।
২. আইনি ব্যবস্থা – দুই পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের হতে পারে।
৩. রাজনৈতিক অস্থিরতা – বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সংঘর্ষ দেশের রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

বর্তমানে নুরুল হক নুরের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হলেও এখনও আশঙ্কামুক্ত নন। চিকিৎসকরা আগামী ৪৮ ঘণ্টা তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখবেন।
রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল আলোচনা, আর দেশের মানুষ এখন নুরের সুস্থতার অপেক্ষায়।

MAH – 12541 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button