আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত ব্যক্তিত্ব এবং ভেষজ চিকিৎসক মালা আলি কুর্দিস্তানি ঘোষণা দিয়েছেন যে তিনি খুব শীঘ্রই বাংলাদেশ সফরে আসবেন। সফরের মূল উদ্দেশ্য হলো বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতাল উদ্বোধন এবং ভেষজ ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা কার্যক্রম সম্প্রসারণ।
মালা আলি কুর্দিস্তানি কারা?
মালা আলি কুর্দিস্তানি মূলত ইরাকের কুর্দিস্তানের বাসিন্দা। ফেসবুকে তিনি নিজের নামের সঙ্গে পরিচিত, তবে আসল নাম মোল্লাহ আলি কালাক। তাঁর ফেসবুক পেজে ৫৮ লাখের বেশি ফলোয়ার রয়েছে। ২৮ বছর ধরে তিনি ভেষজ চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ।
তিনি কোরআনের আয়াত ব্যবহার করে অসুস্থ ও জ্বিনে আক্রান্ত মানুষদের সুস্থ করার দাবি করেন। তাঁর কর্মকাণ্ড ইরাকের কুর্দিস্তান প্রদেশের ইরবিল শহর থেকে শুরু হয়। ৪০ কিলোমিটার দূরে নিজের গ্রাম কালাকে তিনি হিলিং সেন্টার বা রোগ নিরাময় কেন্দ্র স্থাপন করেন। ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য তিনি ভেষজ ওষুধ ব্যবহার করেন।
তবে তাঁর চিকিৎসা কার্যক্রম বিতর্কিত। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তাঁর কেন্দ্র বারবার বন্ধ করেছে। বেআইনি চিকিৎসা কার্যক্রম ও অনৈতিক আচরণের অভিযোগে একাধিকবার গ্রেফতারও হন তিনি। সৌদি আরব ও পাকিস্তানেও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে নজরদারির মুখে পড়েন।
বাংলাদেশ সফরের ঘোষণা
মালা আলি কুর্দিস্তানি বুধবার (২৭ আগস্ট) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে ঘোষণা দিয়েছেন যে তিনি বাংলাদেশ সফরে আসবেন। তিনি লিখেছেন, সফরটি হবে ঐতিহাসিক। তাঁর লক্ষ্য ১ হাজার শিক্ষার্থীকে ভেষজ চিকিৎসা শেখানো এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া।
তিনি আরও জানান, তিনি ২৫০ প্রকারের ভবিষ্যদ্বাণীমূলক ও ভেষজ ওষুধ তৈরি করেছেন। তাঁর মতে, এই উদ্যোগ শুধু স্বাস্থ্যখাতকে নয়, দেশের অর্থনীতিকেও শক্তিশালী করবে। কারণ বিদেশি পর্যটক চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে আসবেন।
সফরের উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা
মালা আলি কুর্দিস্তানি বলেন, তাঁর জীবনের লক্ষ্য আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য গরিব মানুষের সেবা করা। বিশেষ করে অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন ইসলামি দেশগুলোতে। তিনি বাংলাদেশের হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয় উদ্বোধনের মাধ্যমে শিক্ষাগত ও চিকিৎসাসেবায় অবদান রাখবেন।
তাঁর সফরের মাধ্যমে নতুন শিক্ষার্থী ও চিকিৎসক তৈরির পাশাপাশি ভেষজ ওষুধের মান উন্নয়ন, গবেষণা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও বৃদ্ধি পাবে।
আগের কর্মকাণ্ড ও বিতর্ক
মালা আলি কুর্দিস্তানি আগে পাকিস্তান সফর করেছিলেন। সেখানে সাধারণ মানুষ ছাড়াও শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদ ও ধর্মীয় নেতারা তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি তাঁকে কোলাকুলি করেছেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার আসাদ কায়সার তাঁকে পাকিস্তানি টুপি পরিয়ে স্বাগত জানিয়েছিলেন।
তবে তাঁর কার্যক্রম বিতর্কমুক্ত নয়। ইরাক ও সৌদি আরবে তাঁর চিকিৎসা কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে আনার প্রচেষ্টা করা হয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে একাধিকবার গ্রেফতার করেছেন। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, বিদেশে তাঁর কার্যক্রম স্থানীয় আইন ও নিয়মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে।
বিশ্লেষণ
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মালা আলি কুর্দিস্তানির বাংলাদেশ সফর শিক্ষাগত এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলতে পারে। তবে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড এবং ভেষজ চিকিৎসার বৈজ্ঞানিক প্রমাণ সীমিত হওয়ায় সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।
বাংলাদেশ সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি, আইনগত বাধ্যবাধকতা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিবেচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারেন। এছাড়া বিদেশি পর্যটক ও শিক্ষার্থীদের জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ।
সারসংক্ষেপ
মালা আলি কুর্দিস্তানির বাংলাদেশ সফর স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং অর্থনীতিতে নতুন দিগন্তের সূচনা হতে পারে। তবে বিতর্ক ও বৈজ্ঞানিক সীমাবদ্ধতার কারণে সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে। আশা করা যায়, সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এই সফর বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে।
এম আর এম – ১০৮৭, Signalbd.com



