চব্বিশ স্বাধীনতার কাছাকাছি, কিন্তু সেই বীরদের কার্যকলাপে অতিষ্ঠ দেশবাসী: কাদের সিদ্দিকী
বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী চলতি বছরের গণআন্দোলনকে স্বাধীনতার কাছাকাছি উল্লেখ করেছেন। তবে একইসঙ্গে তিনি দাবি করেন, এই আন্দোলনের বীরেরা যেভাবে আচরণ করছেন, তাতে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল পৌর শহরের সোনার বাংলায় নিজ বাসভবনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
আন্দোলন নিয়ে কাদের সিদ্দিকীর মন্তব্য
সংবাদ সম্মেলনে কাদের সিদ্দিকী বলেন, “আমি দেশবাসী ও দুনিয়াবাসীকে জানাতে চাই, চব্বিশের আন্দোলন আমি স্বাধীনতার কাছাকাছি মনে করি। আমি তাদের সমর্থন করি, কিন্তু তাদের আচরণে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। আমি ভেবেছিলাম এই বিজয় হাজার বছর স্থায়ী হবে। কিন্তু মাত্র এক বছরেই সেই বিজয় ধ্বংসের দিকে যাবে, এটা আমি আশা করিনি।”
তিনি আরও বলেন, আন্দোলনের নামে যারা জনগণের কণ্ঠ রুদ্ধ করছে, মতপ্রকাশের সুযোগ কেড়ে নিচ্ছে—তারা স্বৈরাচার থেকে ভিন্ন কিছু নয়। কাদের সিদ্দিকীর মতে, মানুষকে স্বাধীনভাবে কথা বলার ও শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করার অধিকার দিতে হবে।
ভাই লতিফ সিদ্দিকীসহ আটক নেতাদের মুক্তির দাবি
সংবাদ সম্মেলনে কাদের সিদ্দিকী তাঁর বড় ভাই আবদুল লতিফ সিদ্দিকীসহ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আটক সবার মুক্তি দাবি করেন। তিনি বলেন, “লতিফ ভাই একজন ভালো মানুষ, টাঙ্গাইলের রাজনীতিতে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তাঁকে সম্মানজনকভাবে মুক্তি দিতে হবে।”
কাদের সিদ্দিকী অভিযোগ করেন, “রিপোর্টার্স ইউনিটিতে একটি সভায় আমাদের নেতাদের উপস্থিতি ছিল। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন ড. কামাল হোসেন, উপস্থিত ছিলেন জেড আই খান পান্নাও। হঠাৎ কিছু লোক মব সৃষ্টি করে সভা বানচাল করে দেয় এবং অতিথি-শ্রোতাদের পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। গণতান্ত্রিক দেশে এমন ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।”
সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে মতামত
জাতীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে কাদের সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সংকট হলো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন। তিনি দাবি করেন, ভোটাররা যেন নিরাপদে ভোট দিতে পারেন, সেই পরিবেশ তৈরি করা এখন জরুরি।
তার মতে, নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার না হলে জনগণ কোনো প্রকার নির্বাচনকে গ্রহণ করবে না। তিনি বলেন, “নির্বাচন এমনভাবে হতে হবে, যাতে প্রতিটি মানুষ কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে নিরাপদ বোধ করে। অন্যথায় অনির্বাচিত সরকার যে সংস্কার করবে, তা জনগণ মেনে নেবে না।”
আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ও বিশ্লেষণ
কাদের সিদ্দিকীর এই বক্তব্য মূলত সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতিফলন। গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন স্থানে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও গণআন্দোলনের কর্মসূচি চলছে। অনেক সাধারণ মানুষ প্রথমে এসব আন্দোলনের পাশে দাঁড়ালেও বর্তমানে আন্দোলনকারীদের কিছু কার্যকলাপে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কাদের সিদ্দিকীর মন্তব্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করছে। তিনি একদিকে আন্দোলনের নৈতিকতা ও গুরুত্ব স্বীকার করছেন, অন্যদিকে জনগণের দুর্ভোগের বিষয়টি সামনে আনছেন। এটি ভবিষ্যতের রাজনীতিতে আন্দোলনকারীদের জন্য একটি সতর্কবার্তা হতে পারে।
জনগণের প্রতিক্রিয়া
রাজনৈতিক অঙ্গন ছাড়াও সাধারণ মানুষও এই পরিস্থিতি নিয়ে মতামত প্রকাশ করছে। অনেকে মনে করছেন, আন্দোলনের মূল লক্ষ্য নষ্ট হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। আবার অনেকে বলছেন, স্বাধীনতার মতো বড় অর্জনের সঙ্গে আন্দোলনকে তুলনা করলেও আন্দোলনকারীদের আচরণ প্রশ্নবিদ্ধ হলে তার গ্রহণযোগ্যতা কমে যায়।
পরিশেষে
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্য বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক নির্দেশ করছে। তিনি যেমন গণআন্দোলনের বিজয়কে স্বাধীনতার কাছাকাছি বলছেন, তেমনি আন্দোলনকারীদের আচরণে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষের পক্ষেও কথা বলছেন। এখন দেখার বিষয় হলো, তাঁর এই বক্তব্য আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি ও ভবিষ্যৎ নির্বাচনী রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলে।
এম আর এম – ১০৮৪, Signalbd.com



