বাংলাদেশ

আন্দোলনরত প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদ জানাল বুয়েট

Advertisement

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। বুধবার বুয়েটের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্বে) এন এম গোলাম জাকারিয়ার সই করা বিবৃতিতে এই প্রতিবাদ প্রকাশিত হয়। বিবৃতিতে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে লক্ষ্য করে পুলিশের লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহারের ঘটনা নিন্দনীয় হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

ঘটনার বিবরণ

গত মঙ্গলবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিএসসি (ইঞ্জিনিয়ারিং) গ্র্যাজুয়েট ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের পেশাগত দাবি, সহকারী প্রকৌশলী বা সমমানের পদে চাকরির অধিকার নিশ্চিত করা, সংশ্লিষ্ট গ্রেডে কোটা–সংক্রান্ত বৈষম্য দূর করা এবং চাকরিতে সুযোগ বৃদ্ধি করার দাবিতে আন্দোলন করছিল।

শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে ‘লংমার্চ’ করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশ তাদের উপর কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে, লাঠিচার্জ চালায় এবং অনেক শিক্ষার্থী আহত হন। শিক্ষার্থীদের দাবি, অন্তত ৫০–৬০ জন আহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি, শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল ছুঁড়ে হামলা করেছে এবং পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন।

বুয়েট প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

বুয়েটের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধান করার পরিবর্তে পুলিশের এ ধরনের আচরণ পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অধিকার রক্ষার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।

এছাড়া, বিবৃতিতে আশা প্রকাশ করা হয়েছে যে হামলার ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিএসসি ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের দীর্ঘদিন ধরে পেশাগত দাবিসহ চাকরির ক্ষেত্রে সমতা ও কোটা–সংক্রান্ত বৈষম্য দূর করার জন্য আন্দোলন চলছিল। এর আগে শিক্ষার্থীরা শাহবাগে পাঁচ ঘণ্টা অবরোধও করেছিল। এই আন্দোলনের মূল দাবিগুলো হলো ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নামের আগে ‘প্রকৌশলী’ উপাধি যুক্ত করা, ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নবম গ্রেডে পদোন্নতি দেওয়া এবং স্নাতক প্রকৌশলীদের দশম গ্রেডে সুযোগ নিশ্চিত করা।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

পুলিশের হামলার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভ বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষার্থীরা সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের মাধ্যমে নিজেরা এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুলিশের এই আচরণকে কঠোরভাবে নিন্দা জানিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াচ্ছে।

রাজনৈতিক ও সামাজিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে লক্ষ্য করে পুলিশি ব্যবস্থা গ্রহণ শিক্ষার্থীদের প্রতি আস্থা কমাতে পারে এবং সামাজিক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।

বিশেষজ্ঞ মতামত

শিক্ষাবিদ ও বিশ্লেষকরা মনে করেন, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি সমাধানের জন্য সংলাপ ও আলোচনা সবচেয়ে কার্যকর উপায়। পুলিশি হামলা পরিস্থিতি আরও উত্তেজিত করতে পারে এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে জনগণের সমর্থনও বৃদ্ধি পেতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা আরও যোগ করেছেন, সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ অবলম্বন করে শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়ন করে, তাহলে দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে ন্যায্যতা এবং সমতা নিশ্চিত হবে।

পরিশেষে

বুয়েট প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুলিশের হামলার তীব্র নিন্দা ও শিক্ষার্থীদের প্রতি সমর্থনের ঘোষণা এই আন্দোলনের গুরুত্ব ও শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ অধিকারকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। যথাযথ তদন্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ আশা করছে বিশ্ববিদ্যালয়। আগামীদিনে শিক্ষার্থীদের দাবি ও সরকারী পদক্ষেপের উপর সমগ্র দেশের দৃষ্টি থাকবে।

এম আর এম – ১০৭০, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button