ইবতেদায়ি শিক্ষকদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটা।জলকামান ব্যবহার
শাহবাগে ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষকদের জাতীয়করণের দাবিতে বিক্ষোভ
ইবতেদায়ি শিক্ষকদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটা।
রাজধানী ঢাকার শাহবাগ মোড়ে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষকদের জাতীয়করণের দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশ লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও জলকামান ব্যবহার করেছে। রোববার (২৬ জানুয়ারি ২০২৫) দুপুর ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষকরা বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলোকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ন্যায় জাতীয়করণের দাবি জানাচ্ছিলেন। তারা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিতে জাতীয় জাদুঘরের সামনে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগোতে চাইলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও জলকামান ব্যবহার করে। এতে কয়েকজন শিক্ষক আহত হন। আহত শিক্ষকদের সহকর্মীরা রিকশায় করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালিদ মনসুর বলেন, “তারা মিছিল নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাও করতে যাচ্ছিলেন, আমরা শাহবাগ মোড়ে তাদেরকে আটকে দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছি। তারা চারুকলার সামনে অবস্থান নিয়েছে।”
জাতীয়করণের দাবিতে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকদের বিক্ষোভ সমাবেশে লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও জলকামান ব্যবহার করেছে পুলিশ।
আজ রোববার দুপুর ১টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।
এতে কয়েকজন মাদরাসা শিক্ষক আহত হয়েছেন।
ঘটনাস্থল থেকে দ্য ডেইলি স্টারের আলোকচিত্রী জানান, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলোকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ন্যায় জাতীয়করণের দাবিতে বিক্ষোভ করছিলেন মাদরাসা শিক্ষকরা।
দুপুরে তারা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিতে জাতীয় জাদুঘরের সামনে দেওয়া পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সামনে আগাতে চাইলে তাদের লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও জলকামান ব্যবহার করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।
এসময় আহত শিক্ষকদের রিকশায় তুলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের দিকে নিয়ে যান সহকর্মীরা।
অন্যদের চারুকলা অনুষদের সামনে অবস্থান করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষকদের জাতীয়করণের পটভূমি ও পূর্ববর্তী আন্দোলন
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয়করণের দাবি জানিয়ে আসছেন। ২০২৪ সালের ২২ আগস্ট জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষকরা ৮ হাজারের বেশি ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবি জানান। বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির ব্যানারে আয়োজিত ওই কর্মসূচিতে সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা তাজুল ইসলাম ফরাজী বলেন, “মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সব শর্ত পূরণ করে এ মাদ্রাসাগুলো রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত হয়। মাদ্রাসাগুলোতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সরকারি একই সিলেবাসে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়। অথচ মাস শেষে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ২২-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পান। কিন্তু ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকদের জাতীয়করণ তো দূরের কথা এমপিওভুক্তও করা হয়নি।”
এর আগে, ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক ঐক্যজোট জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে সাত দফা দাবি জানায়, যার মধ্যে ছিল দেশের সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণ, ছাত্র-ছাত্রীদের বন্ধ হওয়া উপবৃত্তি পুনরায় চালু করা এবং কোডবিহীন প্রতিষ্ঠানের কোড প্রদান।
ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষকদের দাবির যৌক্তিকতা
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো সরকারি বিধি-নিয়ম অনুসরণ করে চাকরি করছেন। তারা প্রায় ৪০ বছর ধরে বিনা বেতনে শিক্ষকতা পেশায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের দাবি, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলোও জাতীয়করণ করা হোক, যাতে তারা ন্যায্য বেতন-ভাতা পেতে পারেন।
সরকারের প্রতিক্রিয়া ও পরবর্তী পদক্ষেপ
সরকারের পক্ষ থেকে ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে এখনও কোনো সুনির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে, শিক্ষকদের আন্দোলন ও বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ও সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।
মন্তব্যঃ
ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষকদের জাতীয়করণের দাবি দীর্ঘদিনের। তাদের এই দাবির প্রতি সরকারের সুদৃষ্টি ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, যাতে শিক্ষকেরা ন্যায্য অধিকার ও সম্মানজনক জীবনযাপন করতে পারেন।