তৌহিদ আফ্রিদি কিডনি রোগের কাগজপত্র জমা দিয়েছে, এগুলো বানানো যায়: রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী

কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদি আদালতে দাবি করেছেন তিনি কিডনি রোগে ভুগছেন এবং এ–সংক্রান্ত কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর দাবি, এসব কাগজপত্র সহজেই বানানো সম্ভব এবং সেগুলো ভুয়া হতে পারে। এ মামলায় আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের মন্তব্য
আজ সোমবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নয়ন সাংবাদিকদের জানান, তৌহিদ আফ্রিদি অসুস্থতার অজুহাত দেখাচ্ছেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, “এখন সবাই জানে এসব কাগজপত্র বানানো যায়। আসামিরা ধরা পড়লে প্রায়ই এমন কাগজপত্র আদালতে জমা দেয়।” তিনি দাবি করেন, আফ্রিদির চলাফেরায়ও কোনো অসুস্থতার প্রমাণ মেলে না।
অসুস্থতার দাবি ও আসামি পক্ষের বক্তব্য
অন্যদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী খায়রুল ইসলাম আদালতে বলেন, তৌহিদ আফ্রিদি একজন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং তিনি দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। তার কিডনি, লিভার এবং ক্যান্সারজনিত সমস্যা রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। আসামি পক্ষের মতে, আইন অনুযায়ী গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিকে রিমান্ডে নেওয়া যায় না। এজন্য তারা আদালতে চিকিৎসাসংক্রান্ত বিভিন্ন নথি জমা দিয়েছেন।
রিমান্ড মঞ্জুরের সিদ্ধান্ত
উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শোনার পর আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফরাজানা হক রিমান্ড মঞ্জুরের এ আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ আরও দাবি করে যে, আফ্রিদি মিডিয়ার মাধ্যমে ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন এবং যাত্রাবাড়ী ঘটনার সঙ্গেও তার সম্পৃক্ততা রয়েছে।
যাত্রাবাড়ী ঘটনার পটভূমি
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় যাত্রাবাড়ীতে আসাদুল হক বাবু নামে এক শিক্ষার্থীকে হত্যার অভিযোগ ওঠে। এ মামলায় তৌহিদ আফ্রিদির নাম উঠে আসে। রাষ্ট্রপক্ষের দাবি, তিনি ‘হাউন আঙ্কেল’সহ বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে মিলে শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছিলেন। আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের অমানবিকভাবে হেনস্তা করা এবং ভিডিও ধারণের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
গ্রেফতার ও আগের পদক্ষেপ
এর আগে রোববার রাতে সিআইডির একটি দল বরিশাল থেকে তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেফতার করে ঢাকায় নিয়ে আসে। এরও আগে ১৭ আগস্ট রাজধানীর গুলশান থেকে আফ্রিদির বাবা নাসিরকে গ্রেফতার করা হয়। ওই মামলাতেও আদালত তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ: মিডিয়া ব্যবহার করে ষড়যন্ত্র
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, তৌহিদ আফ্রিদি একজন ‘মিডিয়া সন্ত্রাসী’। বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, তিনি হাউন আঙ্কেলের সঙ্গে মিলে সরকারবিরোধী প্রচারণা চালিয়েছেন এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন। তার বিরুদ্ধে দেশের অভ্যন্তরে সন্ত্রাস উস্কে দেওয়ার অভিযোগও আনা হয়েছে।
আসামি পক্ষের পাল্টা অবস্থান
আসামি পক্ষ অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা বলছে, আফ্রিদিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ফাঁসানো হচ্ছে। আদালতে তাদের দাবি, একজন অসুস্থ মানুষকে রিমান্ডে নেওয়া আইনের পরিপন্থী।
সামনে কী হতে পারে
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, আসামি পক্ষ যে কাগজপত্র জমা দিয়েছে সেগুলো আদালত পর্যালোচনা করে দেখতে পারে। যদি সত্যিই গুরুতর অসুস্থতার প্রমাণ মেলে, তাহলে রিমান্ড আদেশ পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ যদি প্রমাণ করতে পারে কাগজপত্র ভুয়া, তাহলে আফ্রিদির আইনি অবস্থান আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।
তৌহিদ আফ্রিদির অসুস্থতার দাবি এবং রাষ্ট্রপক্ষের পাল্টা অবস্থান আদালতে তীব্র বিতর্ক তৈরি করেছে। এখন আদালতের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করছে, এ মামলায় কোন দিকে মোড় নেবে ঘটনাপ্রবাহ।
এম আর এম – ১০৪১, Signalbd.com