ঘরে ফ্রিজের কম্প্রেসার বিস্ফোরণে দুই পরিবারের ৯ জন দগ্ধ

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার হিরাজিল গ্রামে একটি আধা পাকা ঘরে ফ্রিজের কম্প্রেসার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এই দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৯ জন দগ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ সবাইকে ঢাকায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
বিস্ফোরণের কারণ ও প্রাথমিক তদন্ত
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল যে গ্যাস লাইন থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে, তবে পরে তদন্তে জানা যায় যে ফ্রিজের কম্প্রেসার বিস্ফোরণ থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। আদমজী ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. মীরন মিয়া বলেন, “আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ফ্রিজটি পরীক্ষা করেছি। দেখা যায়, ফ্রিজের কম্প্রেসার বিস্ফোরণের ফলে ফেটে গেছে। ওই বিস্ফোরণ থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয় এবং এতে পরিবারের সদস্যরা দগ্ধ হন।”
তিনি আরও জানান, “আশপাশে কিংবা ঘরের ভেতরে অন্য কোনো ধরনের গ্যাসের আলামত পাইনি। সবকিছুই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ফ্রিজের কম্প্রেসার থেকেই বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছিল।”
দগ্ধ পরিবারের সদস্যরা
দগ্ধ ব্যক্তিরা হলেন:
- তানজিল ইসলাম (৪০): দিনমজুর
- আসমা বেগম (৩৫): তানজিলের স্ত্রী
- তৃষা আক্তার (১৭): তানজিল ও আসমার মেয়ে
- আরাফাত (১৫): তানজিল ও আসমার ছেলে
- হাসান (৩৫): দিনমজুর
- সালমা বেগম (৩২): হাসানের স্ত্রী
- ইমাম উদ্দিন (১ মাস): হাসান ও সালমার ছেলে
- জান্নাত (৪): হাসান ও সালমার মেয়ে
- মুনতাহা (১১): হাসান ও সালমার মেয়ে
আসামা ও সালমা দুই বোন। তাদের মা **তাহেরা খাতুন (৬০)**ও দগ্ধ হয়েছেন।
চিকিৎসা ও বর্তমান অবস্থা
জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক সার্জন ডা. সুলতান মাহমুদ শিকদার জানান, “৯ জন দগ্ধ রোগীকে ভোরে হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে হাসানের শরীরের ৪৪ শতাংশ, সালমার ৪৮ শতাংশ, আসমার ৪৮ শতাংশ, তৃষার ৫৩ শতাংশ, জান্নাতের ৪০ শতাংশ, মুনতাহার ৩৭ শতাংশ এবং এক মাস বয়সি ইমামের শরীরের ৩০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তবে তানজিল ইসলামকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়েছে।”
স্থানীয়দের বিবরণ
দগ্ধ হাসানের ছোট ভাই রকিবুল জানান, তার ভাই ও ভায়রা ভাই দিনমজুরের কাজ করতেন। তারা সিদ্ধিরগঞ্জের একটি আধা সেমিপাকা ঘরে পরিবার নিয়ে থাকতেন। রাতে হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে দুই পরিবারের সদস্যরা দগ্ধ হন। পরে তাদের দ্রুত হাসপাতালে আনা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. মামুন বলেন, “অগ্নিদগ্ধ হাসানের শ্বশুর আব্দুর রশিদ এই বাড়ির কেয়ারটেকার হিসেবে থাকতো। কিছুদিন আগে রশিদ মারা যান। তার তিন মেয়ে, জামাই ও নাতি-নাতনি তিনটি কক্ষে ভাড়া থাকতো। এর মধ্যে দুটি কক্ষে সবাই অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে বিদ্যুতের শর্ট সার্কিটের কারণে ফ্রিজের কম্প্রেসারের বিস্ফোরণের কারণে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।”
ফ্রিজের কম্প্রেসার বিস্ফোরণের ঝুঁকি
ফ্রিজের কম্প্রেসার বিস্ফোরণ একটি বিরল কিন্তু মারাত্মক দুর্ঘটনা। বিশেষজ্ঞরা জানান, ফ্রিজের কম্প্রেসারে গ্যাস লিকেজ, শর্ট সার্কিট বা অতিরিক্ত চাপের কারণে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। এই ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ফ্রিজের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, বৈদ্যুতিক সংযোগের নিরাপত্তা ও কম্প্রেসারের অবস্থা পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।
নিরাপত্তা পরামর্শ
- নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ: ফ্রিজের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।
- বৈদ্যুতিক সংযোগ পরীক্ষা: বৈদ্যুতিক সংযোগ ও তারের অবস্থা নিয়মিত পরীক্ষা করুন।
- প্রযুক্তিগত সহায়তা: ফ্রিজের কোনো সমস্যা দেখা দিলে পেশাদার প্রযুক্তিবিদের সাহায্য নিন।
- সতর্কতা অবলম্বন: ফ্রিজের আশপাশে অতিরিক্ত তাপ বা আগুনের উৎস থেকে দূরে রাখুন।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ফ্রিজের কম্প্রেসার বিস্ফোরণে একই পরিবারের ৯ জন দগ্ধ হওয়ার ঘটনা একটি হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা। এই দুর্ঘটনা আমাদেরকে ফ্রিজ ও অন্যান্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণের গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দেয়। আমরা সকলেই যদি সতর্ক ও সচেতন হই, তাহলে এই ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সম্ভব। দগ্ধ পরিবারের সদস্যদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি এবং তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সমাজের সকল স্তরের মানুষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
MAH – 12438 , Signalbd.com