ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র যা-ই বলুক, যুদ্ধ করতে ভয় পায় না ইরান: ইরানের প্রেসিডেন্ট
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান শুক্রবার এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের অব্যাহত হুমকি ও ষড়যন্ত্রের মুখেও ইরান ভীত নয়। তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, ইরান যুদ্ধের পক্ষে নয়, তবে শত্রুপক্ষ আক্রমণ করলে দেশ প্রতিরোধ করবে এবং শক্ত জবাব দেবে। তার দাবি, আমেরিকা ও ইসরায়েল ইরানকে বিভক্ত ও দুর্বল করার চেষ্টা করছে, কিন্তু কোনো ইরানি জনগণই তা মেনে নেবে না।
ইরানের প্রেসিডেন্টের স্পষ্ট বার্তা
পেজেশকিয়ান বলেন, “আমরা লড়াই চাই না। তবে যদি আমাদের ভূমি বা সার্বভৌমত্বে আঘাত করা হয়, আমরা নীরব থাকব না। ইরান যুদ্ধকে ভয় করে না।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমেরিকা ও ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু ইরানের জনগণ ঐক্যবদ্ধ এবং স্বাধীনতার প্রশ্নে আপস করবে না।”
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ
ইরানের প্রেসিডেন্ট দাবি করেন, বিপ্লবের শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল নানা উপায়ে ইরানকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। হত্যাচেষ্টা, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, আন্তর্জাতিক চাপ—সবকিছুই সেই কৌশলের অংশ। তবুও চার দশকের বেশি সময় ধরে ইরান তাদের পরিকল্পনা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে।
তার মতে, ওয়াশিংটন ও তেলআবিবের মূল উদ্দেশ্য হলো মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব হ্রাস করা এবং দেশটিকে অভ্যন্তরীণভাবে দুর্বল করা।
ইউরোপের পদক্ষেপ ও পারমাণবিক ইস্যু
সম্প্রতি যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি—যাদের ই-থ্রি বলা হয়—ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ঘিরে জাতিসংঘে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের উদ্যোগ নিয়েছে। এ বিষয়ে পেজেশকিয়ান স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ইউরোপের অভিযোগগুলো আইনি ভিত্তিহীন।
তিনি দাবি করেন, ইরান কখনো চুক্তি ভঙ্গ করতে চায়নি, বরং সবসময় সমাধান খুঁজেছে। কিন্তু পশ্চিমা শক্তিগুলো নিজেদের স্বার্থে একতরফাভাবে চাপ প্রয়োগ করছে।
জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাঈদ ইরাভানি আরও বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোর শর্ত বাস্তবসম্মত নয়। বরং তাদের উচিত ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তিকে রক্ষা করা।
আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
বিশ্লেষকদের মতে, পেজেশকিয়ানের এই বক্তব্য শুধু ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নয়, বরং সমগ্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি বার্তা। ইরান দেখাতে চাইছে, তারা কোনো চাপেই ভেঙে পড়বে না।
মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে ইরান অভ্যন্তরীণ জনগণকে আশ্বস্ত করছে এবং একইসঙ্গে পশ্চিমাদের কাছে শক্ত বার্তা দিচ্ছে।
ইতিহাস থেকে শিক্ষা
ইরান অতীতে একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ও ইসরায়েলের সামরিক হুমকির মুখোমুখি হয়েছে। ইরাক-ইরান যুদ্ধ কিংবা ট্রাম্প প্রশাসনের ‘সর্বোচ্চ চাপের নীতি’—সবকিছুই ইরানকে পরীক্ষার মুখে ফেলেছে। তবে দেশটি টিকে গেছে এবং এখনও পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে।
তাই বিশেষজ্ঞদের ধারণা, পেজেশকিয়ানের বক্তব্য মূলত সেই ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতারই পুনরাবৃত্তি।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইরানের এই অবস্থান দুইভাবে দেখা যেতে পারে।
প্রথমত, এটি অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জনগণকে বোঝানো হচ্ছে, সরকার দুর্বল হয়নি।
দ্বিতীয়ত, এটি কূটনৈতিক কৌশল। আন্তর্জাতিক আলোচনায় ইরান নিজের শক্তি প্রদর্শন করছে।
একজন বিশ্লেষক বলেন, “পশ্চিমারা ইরানকে নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে কোণঠাসা করতে চায়। কিন্তু ইরান দেখাচ্ছে, তাদের জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকলে তারা ভয় পায় না।”
ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি কোন দিকে যেতে পারে?
ইরানের প্রেসিডেন্টের বক্তব্যে স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে যে, দেশটি সমঝোতা চায়, তবে আত্মসমর্পণ নয়। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল যদি চাপ বাড়ায়, তবে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা আরও তীব্র হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সংঘাত শুরু হলে তা শুধু ইরান নয়, গোটা অঞ্চলের শান্তি ও বৈশ্বিক অর্থনীতিকে প্রভাবিত করবে।
পরিশেষে
ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানের বক্তব্যে পরিষ্কার বার্তা পাওয়া গেছে—ইরান যুদ্ধ চায় না, কিন্তু যুদ্ধে ভয়ও পায় না। পশ্চিমা চাপ ও হুমকি সত্ত্বেও দেশটি আত্মবিশ্বাসী ও দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে। এখন দেখার বিষয়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল কীভাবে এই বার্তার জবাব দেয় এবং ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি কোন দিকে মোড় নেয়।
এম আর এম – ১০৯৩, Signalbd.com



