বাংলাদেশ

স্টেডিয়াম নির্মাণের ব্যয় ৫১ লাখ থেকে ১৪ কোটি হওয়ার ব্যাখ্যা দিলেন ক্রীড়া সচিব

উপজেলা পর্যায়ে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় বৃদ্ধিকে ঘিরে দেশজুড়ে সমালোচনা হলেও ক্রীড়া সচিব জানিয়েছেন, এর পেছনে রয়েছে যৌক্তিক কারণ। অবকাঠামোর উন্নয়ন, জমি অধিগ্রহণ ও নতুন সুবিধা যুক্ত হওয়ায় ব্যয় বেড়েছে বলেই তার দাবি।

সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দাবি করা হয়, উপজেলা পর্যায়ে মিনি স্টেডিয়াম তৈরির ব্যয় ৫১ লাখ টাকা থেকে বেড়ে ১৪ কোটিতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানা মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। তবে ক্রীড়া সচিব মাহবুবুল আলম সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট করে বলেছেন, সংবাদে প্রকাশিত তথ্য আংশিক ও বিভ্রান্তিকর। প্রকল্পের বাস্তব পরিস্থিতি উপেক্ষা করে এ ধরনের খবর প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রকল্প নিয়ে বিতর্ক ও সচিবের প্রতিক্রিয়া

মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) সচিবালয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে সচিব মাহবুবুল আলম জানান, “প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ৫১ লাখ টাকার প্রকল্প ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন কাঠামোর, আর বর্তমান অনুমোদিত প্রকল্পের পরিসর অনেক বিস্তৃত।”

তার ভাষায়, সংবাদে যে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে তা জনগণের কাছে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে এবং রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রতি অনাস্থা তৈরি করেছে।

আগের প্রকল্পের ব্যয় ও কাঠামো

ক্রীড়া সচিব জানান, প্রথম পর্যায়ে উপজেলা পর্যায়ে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল ১৩১টি উপজেলায়। সেখানে গড় ব্যয় ছিল প্রায় ৫৩.৫২ লাখ টাকা।
সে প্রকল্পে কেবলমাত্র সীমিত অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছিল। যেমন—একতলা প্যাভিলিয়ন, টয়লেট ব্লক, আরসিসি বেঞ্চ এবং মাঠের সাধারণ উন্নয়ন।

অর্থাৎ, আগের কাঠামো ছিল ছোট আকারের এবং সরকারি খাসজমিতে তৈরি হওয়ায় জমি অধিগ্রহণের মতো খরচও লাগেনি।

নতুন প্রকল্পের বিস্তৃতি

বর্তমান প্রকল্পটি হলো উপজেলা পর্যায়ে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ–২য় পর্যায় (১ম সংশোধিত)। এটি বাস্তবায়িত হচ্ছে ১২৩টি উপজেলায়।
এখানে জমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন, গ্যালারি, সীমানা প্রাচীর, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, সোলার প্যানেল, উন্নত মানের প্যাভিলিয়ন এবং অন্যান্য সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে অনুমোদিত গড় ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৪.২০ কোটি টাকা।

সচিব বলেন, “এটি আগের প্রকল্পের তুলনায় বহুগুণ উন্নত এবং বিস্তৃত। জনগণের দীর্ঘমেয়াদি প্রয়োজন মাথায় রেখেই এসব পরিবর্তন আনা হয়েছে।”

ব্যয় বৃদ্ধির কারণ

সংবাদ সম্মেলনে সচিব বিস্তারিতভাবে ব্যয় বৃদ্ধির কারণ তুলে ধরেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—

  • জমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন খরচ
  • গ্যালারি নির্মাণ ও আসন সংখ্যা বৃদ্ধি
  • সীমানা প্রাচীর ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা
  • সোলার প্যানেল ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা
  • ২০১৮ সালের পরিবর্তে ২০২২ সালের রেট সিডিউল ব্যবহার

তিনি বলেন, “প্রকল্পের ব্যয় কেবল ইচ্ছেমতো বাড়ানো হয়নি। নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।”

অনুমোদন প্রক্রিয়া ও স্বচ্ছতা

ক্রীড়া সচিব জানান, এই প্রকল্পে ব্যক্তিবিশেষের একক আগ্রহ বা প্রভাবের কোনো সুযোগ নেই। প্রকল্প অনুমোদনের প্রতিটি ধাপই হয় পরিকল্পনা কমিশন ও প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, উপদেষ্টা এবং কমিশনের সদস্যরা একত্রে আলোচনা করে অনুমোদন দেন।

তার দাবি, গণমাধ্যমে প্রকাশিত “একজন ব্যক্তির আগ্রহে প্রকল্প পাস” হওয়া সম্পর্কিত বক্তব্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা

যদিও সচিবের বক্তব্যে প্রকল্পের ব্যয়ের যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়েছে, সমালোচকরা বলছেন—এত বড় অঙ্কের বৃদ্ধি জনগণের মধ্যে সন্দেহ তৈরি করাই স্বাভাবিক।
সাধারণ মানুষ মনে করছেন, উন্নয়ন প্রকল্পে স্বচ্ছতা বজায় রাখা ও ব্যয়ের সঠিক হিসাব প্রকাশ করা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব।

ব্যয় বৃদ্ধি কতটা যৌক্তিক?

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, একটি ছোট আকারের অবকাঠামো থেকে যদি পূর্ণাঙ্গ স্টেডিয়ামে রূপান্তর করা হয়, তবে ব্যয় কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। তবে জনগণের আস্থার জায়গা হলো স্বচ্ছতা।
প্রকল্পের প্রতিটি ধাপে তথ্য খোলামেলা উপস্থাপন করলে বিতর্ক কমবে এবং উন্নয়ন কার্যক্রমে জনসমর্থন বাড়বে।

সংক্ষিপ্তসার

উপজেলা পর্যায়ে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে বিতর্ক থামার সম্ভাবনা আপাতত কম। সচিবের বক্তব্যে প্রকল্পের যৌক্তিক দিক সামনে এলেও জনগণের কাছে স্বচ্ছ ব্যাখ্যা ও নিয়মিত আপডেট না থাকলে বিভ্রান্তি থেকেই যাবে।
এখন প্রশ্ন হলো, উন্নয়ন প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়ন ও জবাবদিহিতা কতটা নিশ্চিত হবে—সেটাই ভবিষ্যতে সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

এম আর এম – ০৯৪৩, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button