বিশ্ব

নেপালে পরকীয়া ঠেকাতে ‘বিমানে বোমা’ মিথ্যা খবর, গ্রেফতার ৩

বাংলাদেশ বিমানের ঢাকা-কাঠমাণ্ডু রুটের বিজি-৩৭৩ ফ্লাইটে বোমা থাকার মিথ্যা খবর দেওয়ার ঘটনায় র‍্যাব গ্রেফতার করেছে তিনজনকে। এই ঘটনায় বিমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয় এবং ফ্লাইট সাময়িক স্থগিত রাখা হয়। আজ শনিবার (১২ জুলাই) র‍্যাব মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

বোমা মিথ্যা তথ্যের পেছনে পরকীয়া নাটক

র‍্যাবের কর্মকর্তাদের বরাতে জানা যায়, এই মিথ্যা খবরের পেছনে রয়েছে একটি পরকীয়া প্রেমের জটিল ঘটনা। এক যুবক নেপালে তার পরকীয়া প্রেমিকাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। এই বিষয়টি টের পেয়ে তার স্ত্রী বিমানের ওই ফ্লাইটে বোমা থাকার মিথ্যা খবর ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেন যাতে যুবকের পরকীয়া ভ্রমণটি বন্ধ হয়। এরপর যুবকের মা বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ারে ফোন করে বোমা থাকার ভুয়া খবর দেন।

বিমান চলাচল সাময়িক স্থগিত ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

গতকাল শুক্রবার বিকেল বেলা অজ্ঞাত নাম্বার থেকে একটি ফোন আসে, যাতে ঢাকা-কাঠমাণ্ডু রুটের ফ্লাইট বিজি-৩৭৩-এ বোমা থাকার খবর দেওয়া হয়। এই খবর পাওয়ার পর বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ তৎক্ষণাৎ বিমানবন্দর নিরাপত্তা জোরদার করে। বিমানে নিরাপত্তা তল্লাশি চালানো হয়, কিন্তু তল্লাশিতে কোনও বোমা পাওয়া যায়নি। তল্লাশি শেষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে কাঠমাণ্ডু উদ্দেশে যাত্রা করে। বিমানে মোট ১৪২ যাত্রী এবং ৭ জন ক্রু ছিলেন।

র‍্যাবের অভিযান ও গ্রেফতার

র‍্যাবের তৎপরতায় বোমা মিথ্যা খবর ছড়ানো তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন যুবকের স্ত্রী, যুবকের মা এবং আরও একজন সহযোগী। র‍্যাব মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, “এই ধরনের মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিমান চলাচলে বাধা দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এবং বিমান চলাচলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।”

মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা

র‍্যাব জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনের পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমন মিথ্যা খবর ছড়ানোয় দেশের আইন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। যেকোনো ধরনের সন্ত্রাসী বা অশান্তির হুমকির বিরুদ্ধে সরকারের নিকট থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

পরবর্তী করণীয়

বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই ঘটনায় আরও কঠোর নজরদারি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানানো হয়েছে। বিমান যাত্রীদের নিরাপত্তা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এছাড়া, যাত্রী ও জনসাধারণের মধ্যে এ ধরনের মিথ্যা খবরের ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে।

পরকীয়া ঠেকাতে বিমানবন্দরে বোমা আতঙ্ক: বিশ্লেষণ ও প্রভাব

বিমানবন্দরে বোমা থাকার মিথ্যা খবর ছড়ানো এখন একটি গম্ভীর অপরাধে পরিণত হচ্ছে। বিশেষ করে যখন এর পেছনে থাকে পারিবারিক বা ব্যক্তিগত কোনো কটু জটিলতা। এই ঘটনার মাধ্যমে বোঝা যায়, ব্যক্তিগত সমস্যাকে সাময়িকভাবে মিথ্যা ও ভয় দেখিয়ে সমাধান করার চেষ্টা কতটা বিপজ্জনক হতে পারে। এ ধরনের ঘটনার ফলে শুধু নিরীহ যাত্রীরা ভয় পায় না, বিমান চলাচলের নিরাপত্তা ও দেশের সুনামও ক্ষুণ্ন হয়।

মিথ্যা বোমা হুমকির আইনগত দন্ড

বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তি আইনে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর কঠোর শাস্তি রয়েছে। এর আওতায় যারা বিমান চলাচল বা নিরাপত্তা ব্যাহত করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে বিমানবন্দর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও সজাগ ও প্রস্তুত থাকবে।

বিমান যাত্রীর জন্য নিরাপত্তা নির্দেশিকা

যাত্রীরা যাতে এ ধরনের মিথ্যা খবরের জন্য আতঙ্কিত না হন এবং নিরাপদে ভ্রমণ করতে পারেন, সে জন্য বিমানবন্দর ও বিমান সংস্থাগুলো নিয়মিত নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা কর্মসূচি চালায়। নিরাপত্তা তল্লাশি ও যাত্রীদের সহযোগিতাই বিমান চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button