বাংলাদেশ

যে কারণে বিভিন্ন দূতাবাস থেকে সরানো হয়েছে রাষ্ট্রপতির ছবি

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশে বাংলাদেশের সব কূটনৈতিক মিশন, কনস্যুলেট এবং দূতাদের অফিস ও বাসভবন থেকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ছবি সরানোর নির্দেশ দিয়েছে। তবে নির্দেশনার কারণ বা প্রেক্ষাপট এখনও প্রকাশ্যে আসে নি। কিছু দূতাবাসে ইতিমধ্যে ছবি সরানো হয়েছে, আবার কিছুতে তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার বিস্তারিত

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অঞ্চলভিত্তিক কিছু রাষ্ট্রদূতকে টেলিফোনে এই নির্দেশনার কথা জানিয়েছে। সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে জানা গেছে, এই নির্দেশনা মৌখিকভাবে দেওয়া হয়েছে, কোনো আনুষ্ঠানিক চিঠি বা ই-মেইলের মাধ্যমে নয়।
ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্দেশনার বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রদূতদেরকে দেওয়া হয়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের কিছু মিশনে এখনও এই নির্দেশনা পৌঁছায়নি।

বিদেশি দূতাবাসের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া

কিছু দূতাবাস ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রপতির ছবি সরিয়ে ফেলেছে। লন্ডন হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, নির্দেশনা পাওয়ার পর শুক্রবার রাতেই রাষ্ট্রপতির ছবি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কলম্বো দূতাবাসে আগে থেকেই ছবি ছিল না, ফলে সেখানে নতুন করে কোনো পরিবর্তন করা হয়নি।
একাধিক দূতাবাসে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্দেশনা এসেছে কেবল তাদের হেডকোয়ার্টার থেকে, এবং তারা তা অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়েছেন।

নির্দেশনার প্রেক্ষাপট ও ইতিহাস

বাংলাদেশের আগের আইন অনুযায়ী শুধুমাত্র দেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরকারি অফিসে ব্যবহার করার নিয়ম ছিল। রাষ্ট্রপতির ছবি রাখার জন্য কোনো বিশেষ আইন ছিল না।
গত বছরের ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বিভিন্ন সরকারি অফিসে শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরানো হয়। অনেক দূতাবাসে কর্মকর্তারা নিজ উদ্যোগে ছবি সরিয়ে ফেলেছিলেন। তবে এবার সরকারি নির্দেশনা সরাসরি রাষ্ট্রপতির ছবির জন্য এসেছে।

সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব

সংবাদটি প্রকাশ হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুঞ্জন তৈরি হয় যে, রাষ্ট্রপতিকে পদ থেকে সরানো হচ্ছে কি না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শুধু দূতাবাস পর্যায়ে ছবি পরিবর্তনের নির্দেশনা এবং এটি রাষ্ট্রপতির কার্যক্রম বা ক্ষমতায় কোনও প্রভাব ফেলবে না।
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, বিদেশি মিশন থেকে ছবি সরানোর ঘটনা আগামী নির্বাচন বা সরকারের কার্যক্রমে কোনো প্রভাব ফেলবে না।

বিশেষজ্ঞ ও সাবেক কূটনীতিকদের মতামত

সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, রাষ্ট্রপতির ছবি ব্যবহারের জন্য সরকার লিখিতভাবে নির্দেশনা জারি করলে পরিস্থিতি আরও স্বচ্ছ হতো।
সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ূন কবির মন্তব্য করেছেন, যে কোনো সময় সরকার প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং রাষ্ট্রপতির ছবির স্থানান্তরও এরই অংশ।

সিদ্ধান্ত 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখবে। সংশ্লিষ্ট দূতাবাসগুলোর কর্মকর্তারা নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি শুধু সরকারি নির্দেশনার একটি প্রশাসনিক পদক্ষেপ, যার লক্ষ্য কূটনৈতিক মিশনগুলোর ছবি ও প্রতিকৃতি ব্যবস্থাপনা। ভবিষ্যতে এই ধরনের নির্দেশনা নিয়মিত ও লিখিত আকারে প্রকাশ করা হতে পারে।

বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাস ও কনস্যুলেট অফিসে রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর এই নির্দেশনা মূলত প্রশাসনিক পর্যায়ে নেওয়া একটি পদক্ষেপ। তবে সামাজিক ও রাজনৈতিক আলোচনার কারণে এটি অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আগামী দিনে এই নির্দেশনার প্রয়োগ ও প্রতিক্রিয়া আন্তর্জাতিকভাবে কেমন প্রতিফলিত হবে, সেটিই দেখার বিষয়।

এম আর এম – ০৯১৩, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button