ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আরও ২৫২ জন

গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ২৫২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত নতুন আক্রান্তদের মধ্যে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৯ জন এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি হয়েছেন ১৬৩ জন। তবে এই সময়ে ডেঙ্গুতে কারও মৃত্যু হয়নি।
রাজধানী ও বিভাগভিত্তিক আক্রান্তের পরিসংখ্যান
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মহানগরে ৮৯ জন ভর্তি হয়েছেন। বিভাগভিত্তিক পরিস্থিতি হলো—বরিশাল বিভাগে ৬৫ জন, ঢাকা বিভাগে (রাজধানীর বাইরে) ৩২ জন, চট্টগ্রামে ২৫ জন, রাজশাহীতে ১৬ জন, খুলনায় ১৪ জন, ময়মনসিংহে ৬ জন এবং রংপুরে ৫ জন ভর্তি হয়েছেন।
বর্তমানে সারা দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে মোট ১,২৭২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে রাজধানীতে ৪১৪ জন এবং ঢাকার বাইরে ৮৫৮ জন।
চলতি বছরের মোট আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা
এ বছর জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ২৫ হাজার ৫৭৬ জন। এর মধ্যে জুলাই মাসেই আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৬৮৪ জন, যা এ বছরের এক মাসে সর্বোচ্চ।
মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০৪ জনে। মারা যাওয়া রোগীদের মধ্যে ৬১ জন পুরুষ ও ৪৩ জন নারী।
মাসভিত্তিক আক্রান্ত ও মৃত্যুর বিবরণ
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মাসভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়—
- জানুয়ারি: আক্রান্ত ১,১৬১ জন, মৃত্যু ১০ জন
- ফেব্রুয়ারি: আক্রান্ত ৩৭৪ জন, মৃত্যু ৩ জন
- মার্চ: আক্রান্ত ৩৩৬ জন, মৃত্যু ০ জন
- এপ্রিল: আক্রান্ত ৭০১ জন, মৃত্যু ৭ জন
- মে: আক্রান্ত ১,৭৭৩ জন, মৃত্যু ৩ জন
- জুন: আক্রান্ত ৫,৯৫১ জন, মৃত্যু ১৯ জন
- জুলাই: আক্রান্ত ১০,৬৮৪ জন, মৃত্যু ৪১ জন
- আগস্ট (১৪ আগস্ট পর্যন্ত): আক্রান্ত ৪,৫৯৬ জন, মৃত্যু ২১ জন
বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষাকাল এবং এর পরবর্তী সময়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ সাধারণত বেশি দেখা যায়। আবহাওয়ার অনুকূলতা এবং এডিস মশার প্রজননের সুযোগ এ রোগের বিস্তারকে বাড়িয়ে দেয়। বিশেষজ্ঞরা নাগরিকদের সতর্ক থেকে নিজের বাসাবাড়ি ও আশেপাশের স্থান পরিষ্কার রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
প্রতিরোধে যা করণীয়
ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যক্তিগত ও সামাজিক উদ্যোগ নেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। তাদের পরামর্শ—
- বাড়ির ভেতরে ও বাইরে কোথাও পানি জমতে না দেওয়া
- সপ্তাহে অন্তত একদিন ঘরের সব পানির পাত্র ভালোভাবে পরিষ্কার করা
- এডিস মশার বংশবিস্তার রোধে গাছের টব, টায়ার, ড্রাম, ডাবের খোসায় পানি জমে থাকলে তা ফেলে দেওয়া
- সকালে ও বিকালে মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশারি ব্যবহার করা
- ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
সারসংক্ষেপ
ডেঙ্গুর পরিস্থিতি এ বছর উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে, যা জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এখনই যদি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা জোরদার না করা হয়, তবে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
এম আর এম – ০৮৬১, Signalbd.com