আঞ্চলিক

দোকান ভাড়া চাওয়ায় মালিককে পিটিয়ে হত্যা

Advertisement

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নে দোকান ভাড়া চাওয়াকে কেন্দ্র করে মো. জাহাঙ্গীর হোসেন (৫৭) নামে এক দোকান মালিককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার সকালে এই ঘটনাটি ঘটে এবং স্থানীয় এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

পরিবারের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে ভাড়া বকেয়া থাকার পর দোকান ভাড়া চাইতে গেলে প্রভাবশালী কয়েকজন তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে মারধর করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কীভাবে ঘটল এই হত্যাকাণ্ড

বুধবার সকাল ৯টার দিকে সালমদী বাজারে নিজের ভাড়া দেওয়া দোকানের বকেয়া টাকা চাইতে যান জাহাঙ্গীর হোসেন। প্রত্যক্ষদর্শী এবং নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, এ সময় স্থানীয় ইউপি সদস্য তোতা মেম্বার ও তার অনুসারীরা দোকানের ভেতরে নিয়ে গিয়ে জাহাঙ্গীরকে বেধড়ক মারধর করেন।

পরে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার নাসির উদ্দিন বলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে দোকানের ভাড়া চাওয়াকে কেন্দ্র করেই এ সংঘর্ষ হয়েছে। নিহতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে।”

স্থানীয়দের বক্তব্য: ভাড়া নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল দীর্ঘদিনের

নিহতের ছেলে রাসেল সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের দোকান কয়েক মাস ধরে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী লোকজন দখল করে রেখেছে। বারবার ভাড়া চাওয়ার পরও তারা টাকা দেয়নি। আজ সকালে আমার বাবা টাকা চাইতে গেলে তোতা মেম্বার, তার ছেলে খোকন, ভাতিজা রাসেল এবং আরও কয়েকজন মিলে আমার বাবাকে ধরে নিয়ে যায় এবং বেধড়ক মারধর করে।”

রাসেলের দাবি, তার বাবাকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা হয়েছে এবং এই ঘটনার সঙ্গে অন্তত ১০ থেকে ১২ জন জড়িত।

দোকান দখল নিয়ে উত্তেজনা ও পূর্বপটভূমি

স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, গত বছর থেকে সালমদী বাজারের কয়েকটি দোকান দখল করে স্থানীয় একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী দলীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছে।

নিহত জাহাঙ্গীর হোসেনের পরিবার জানায়, অন্যান্য দোকান মালিকদের ভাড়া দেওয়া হলেও তাদের পরিবারকে বারবার বঞ্চিত করা হয়। এ নিয়ে বহুবার বৈঠক হলেও কোনো সমাধান হয়নি। বুধবারের এই ঘটনাটি সেই দীর্ঘদিনের বিরোধের চরম পরিণতি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা

বাজারের বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, সকালে হঠাৎ করে সালমদী বাজার এলাকায় হট্টগোল শুরু হয়। তারা দেখেছেন, কয়েকজন মানুষ জাহাঙ্গীরকে ধরে নিয়ে একটি অফিসের ভেতরে নিয়ে যায় এবং সেখানেই বেধড়ক মারধর করা হয়।

একজন স্থানীয় দোকানি বলেন, “আমরা অনেকেই বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু যারা আক্রমণ করেছে তারা সংখ্যায় বেশি এবং প্রভাবশালী ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যে জাহাঙ্গীর নিথর হয়ে পড়েন।”

পুলিশের তদন্ত ও পরবর্তী পদক্ষেপ

আড়াইহাজার থানার ওসি খন্দকার নাসির উদ্দিন বলেন, “ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। আমরা ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, দোকানের ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটির জের ধরেই মারধরের ঘটনা ঘটে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে কাজ চলছে এবং নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।”

এলাকাজুড়ে উত্তেজনা ও ক্ষোভ

এই হত্যাকাণ্ডের পর মাহমুদপুর ইউনিয়ন ও আশপাশের এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।

বাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এমন ঘটনায় সাধারণ মানুষ ও দোকানদারদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। অনেকে দোকানপাট আগেভাগেই বন্ধ করে বাড়ি ফিরেছেন।

একজন ব্যবসায়ী বলেন, “আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ভাড়া চাওয়ার মতো স্বাভাবিক বিষয় নিয়েও যদি এমন মারামারি হয়, তাহলে আর নিরাপত্তা কোথায়?”

পরিবার ও স্থানীয়দের দাবি: দ্রুত বিচার

নিহতের পরিবারের সদস্যরা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সবার গ্রেপ্তার এবং দ্রুত বিচার দাবি করেছেন। নিহতের ছেলে রাসেল বলেন, “আমরা আইনের মাধ্যমে এর সুষ্ঠু বিচার চাই। আমার বাবার হত্যাকারীরা যাতে কোনোভাবেই ছাড় পেয়ে না যায়, সে ব্যবস্থা নিতে হবে।”

শেষ কথা 

দোকান ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব শেষ হলো এক নির্মম হত্যাকাণ্ডে। এখন স্থানীয়দের একটাই দাবি, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হোক।

এম আর এম – ০৬০৮ , Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button