শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ডে রক্তের গ্রুপ ও অভিভাবকের নম্বর বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ হাইকোর্টের

দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ডে (পরিচয়পত্রে) বাধ্যতামূলকভাবে রক্তের গ্রুপ ও অভিভাবকের ফোন নম্বর সংযুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
আদালতের আদেশে কী রয়েছে?
হাইকোর্ট তার রায়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবকে এই নির্দেশ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছেন। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে জরুরি সময়ে অভিভাবকের সঙ্গে তাৎক্ষণিক যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে রক্তের গ্রুপ সংযুক্ত থাকলে দুর্ঘটনার সময় প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে সুবিধা হবে।
আদালত আরও নির্দেশ দিয়েছেন, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে সাত দিনের মধ্যে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করতে হবে, এবং এই কমিটিকে ৪৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে হবে।
কীভাবে উঠে এলো এই বিষয়টি?
এই নির্দেশ এসেছে উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা একটি জনস্বার্থ রিটের শুনানির প্রেক্ষিতে। এই দুর্ঘটনায় বহু শিক্ষার্থী আহত হয় এবং অনেকে প্রাণ হারায়।
রিটটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ আর রায়হান। তিনি শুনানিতে শিক্ষার্থীদের জীবন রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এই ধরনের পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।
দুর্ঘটনার তদন্ত ও ক্ষতিপূরণ প্রসঙ্গে আদালতের নির্দেশনা
দুর্ঘটনার প্রসঙ্গে হাইকোর্ট আরও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা জারি করেছে। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওই দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবারকে ৫ কোটি টাকা এবং আহতদের পরিবারকে ১ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে রুল জারি করা হয়েছে।
এছাড়াও, আহতদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে দেশে অথবা প্রয়োজনে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, আদালত দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আধুনিক অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে বলেছে।
অতীতেও কি এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল?
বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে নানা রকম আলোচনা হলেও এ ধরনের বাধ্যতামূলক আইডি কার্ড তথ্য অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ এই প্রথম। অতীতে কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যোগে শিক্ষার্থীর রক্তের গ্রুপ উল্লেখ করলেও সেটি বাধ্যতামূলক ছিল না।
দুর্ঘটনার পরপরই অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগে সময়ক্ষেপণ এবং প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য রক্তের ব্যবস্থা করতে সমস্যা হওয়ায় এই নির্দেশ এখন সময়োপযোগী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এই সিদ্ধান্তে কী ধরনের প্রভাব পড়বে?
এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের ফলে দেশের সকল স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষার্থীদের তথ্য হালনাগাদ করতে হবে। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রশাসনিক কাজের ওপর চাপ বাড়লেও, দীর্ঘমেয়াদে এটি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় বড় ভূমিকা রাখবে।
বিশেষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ঘটনা, কিংবা হঠাৎ অসুস্থতার মতো জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হবে। অভিভাবক ও শিক্ষকদের মধ্যে সমন্বয় আরও শক্তিশালী হবে।
সংশ্লিষ্ট পক্ষের মতামত
এই বিষয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, “এই নির্দেশনা বর্তমান পরিস্থিতিতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও যুগোপযোগী। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর উপর দায়িত্ব যেমন বাড়বে, তেমনি অভিভাবকরাও নিশ্চিন্ত থাকবেন।”
সরকারপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এই নির্দেশ বাস্তবায়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যেই একটি বাস্তবায়ন রোডম্যাপ তৈরি করা হবে।
সারসংক্ষেপ
হাইকোর্টের এই নির্দেশনা নিঃসন্দেহে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় একটি বড় পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে। তবে নির্দেশ কার্যকর করতে হলে প্রশাসনিক দক্ষতা, তথ্য সুরক্ষা এবং অভিভাবকদের সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। দেখা যাক, শিক্ষা মন্ত্রণালয় কীভাবে এই নির্দেশ বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নেয়।
এম আর এম – ০৪৬১, Signalbd.com