বাংলাদেশ

পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, কেজিতে বেড়েছে ২৫ টাকা

Advertisement

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের দাম দ্রুত বেড়ে গেছে। বিশেষ করে গত এক সপ্তাহে কেজিতে গড়ে ২৫ টাকা পর্যন্ত মূল্য বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। ফরিদপুরসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পেঁয়াজের দাম মণপ্রতি এক হাজার টাকা বা তারও বেশি বেড়েছে, যা সাধারণ ক্রেতাদের জন্য বড় ধরনের অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেছে। বাজার বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীরা এই দাম বৃদ্ধির জন্য সরবরাহ সংকট এবং চাহিদার অতিরিক্ত চাপকে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

পেঁয়াজের দামের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণ

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদেশি পেঁয়াজ আমদানির অনুপস্থিতি এবং দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ঘাটতি বাজারে দাম বৃদ্ধির মূল কারণ। বিশেষ করে ফরিদপুর অঞ্চলে বিদেশি পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় বাজারে সরবরাহ কমে গেছে। পাশাপাশি, দেশের বড় আকারের পেঁয়াজ চাষিরা এখন পাট ও অন্যান্য ফসলের কাজে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন, যার কারণে পেঁয়াজ উৎপাদন সীমিত হয়েছে।

ফরিদপুর জেলার সালথা উপজেলা ও নগরকান্দার বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, পাইকারি পর্যায়ে পেঁয়াজের সরবরাহ কম থাকায় খুচরা বাজারেও দাম বেড়েছে। অনেক ব্যবসায়ী মনে করছেন, পেঁয়াজ মজুতদাররা বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।

ভোক্তাদের প্রতিক্রিয়া ও অসন্তোষ

দামের এ অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ। ফরিদপুর শহরের হাজী শরীয়তুল্লাহ বাজার থেকে পেঁয়াজ কিনতে আসা শিক্ষক ও এনজিও কর্মীরা জানান, হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের মাসিক খাবারের বাজেটে প্রভাব পড়েছে। অনেকেই ধারণা করছেন, পেঁয়াজের মজুতদারি ও কৃত্রিম সংকটের কারণে দাম বাড়ানো হচ্ছে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসনের বাজার তদারকিতে এই সমস্যা মোকাবেলায় তৎপর রয়েছেন বলে জানা গেলেও, এখনও দাম নিয়ন্ত্রণে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসেনি।

সরকারের পদক্ষেপ ও বাজার নিয়ন্ত্রণ

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শাহেদুজ্জামান জানান, ফরিদপুর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর পেঁয়াজ উৎপাদনকারী জেলা। চলতি মৌসুমে ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যেও বাজারে সরবরাহ সংকট তৈরি হওয়া উদ্বেগজনক।

জেলা প্রশাসক সোহরাব হোসেন জানিয়েছেন, নিয়মিত বাজার তদারকি ও অভিযান চালিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তারা পেঁয়াজের অবৈধ মজুতদারদের খুঁজে বের করে দামের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তদুপরি, দেশের অন্য স্থানে আমদানিও বাড়ানো হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন।

মূল্যবৃদ্ধির অর্থনৈতিক প্রভাব ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি খাদ্যদ্রব্যের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। খাদ্যপণ্য হিসেবে পেঁয়াজের গুরুত্ব বিবেচনায় রাখলে বলা যায়, এর মূল্যবৃদ্ধি গৃহস্থালি ও ব্যবসায়িক বাজেটে চাপ সৃষ্টি করে। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর জন্য এটি ভোগান্তির কারণ।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদে দেশের পেঁয়াজ চাষ ও আমদানির ভারসাম্য রাখা প্রয়োজন। উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা এনে দামের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। অন্যথায়, অস্থির বাজার পরিস্থিতি ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতির জন্য সংকট সৃষ্টি করতে পারে।

সরকারের পরিকল্পনা ও জনগণের আশা

সরকারের তরফ থেকে পেঁয়াজের সরবরাহ বৃদ্ধি ও মজুতদারদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়নের ঘোষণা এসেছে। ভোক্তারা আশা করছেন, শিগগিরই কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে বাজারে পেঁয়াজের মূল্য নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং ভোজ্য পণ্য সহজলভ্য হবে।

তবে বাজার বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, মূল্যবৃদ্ধি প্রতিরোধে শুধু শীর্ষ পর্যায়ের ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়; উপকূলীয় ও গ্রামীণ অঞ্চলেও পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ানো জরুরি।

সমাপ্তি

সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় পেঁয়াজের মতো প্রাথমিক খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লে তাদের দৈনন্দিন জীবনে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। তাই সরকারের উচিত দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে বাজারে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনা। বর্তমান পরিস্থিতিতে পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল রাখা একটি জাতীয় অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহে আমদানি বৃদ্ধি ও স্থানীয় উৎপাদন সঠিকভাবে পরিচালিত হলে বাজারে দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে। তবে এ বিষয়ে ভোক্তা ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন ও সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

এম আর এম – ০৭৬১, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button