ফরিদপুরের নগরকান্দায় মাইকে ঘোষণা দিয়ে দুই গ্রামের সংঘর্ষে পুলিশসহ আহত প্রায় ৫০ জন
ফরিদপুরের নগরকান্দায় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে দুই গ্রামের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে হওয়া এই সংঘর্ষে থানার ওসিসহ অন্তত ৬ পুলিশ সদস্য এবং আরও ৪৪ জন আহত হয়েছেন। শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে ফুলসুতি ইউনিয়নের সলিথা গ্রাম এবং নগরকান্দা পৌরসভার মিরাকান্দা গ্রামবাসী দেশীয় অস্ত্র ও ইটপাটকেল নিয়ে এই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
ঘটনার পটভূমি
স্থানীয়রা জানান, সলিথা মাদরাসায় গত শুক্রবার রাতে ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ওয়াজ চলাকালে মিরাকান্দা ও সলিথা গ্রামবাসীর মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ওই রাতেই গ্রাম দুটির মানুষ উত্তেজিত হয়ে ওঠে।
শনিবার সকালে বিষয়টি আরও উত্তপ্ত আকার ধারণ করে। সলিথা গ্রামে থাকা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়, যা শুনে উভয় গ্রামের শত শত মানুষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষের সময়কার চিত্র
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষে উভয় পক্ষ ঢাল, কাতরা, সড়কি, বল্লম, রামদা ও ইটপাটকেল ব্যবহার করে। সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। এতে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
এ সময় সংঘর্ষে বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ভাঙচুরের শিকার ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, তাদের ঘরবাড়ি ও দোকানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
আহতদের অবস্থা
এই সংঘর্ষে আহত অন্তত ৫০ জনের মধ্যে ৩০ জনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আহতদের মধ্যে নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবং আরও ৬ পুলিশ সদস্য রয়েছেন।
পুলিশের ভূমিকা ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ
সংঘর্ষের খবর পেয়ে নগরকান্দা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা সার্কেল) মো. আসাদুজ্জামান শাকিল জানান, “বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। পরবর্তী কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এলাকাটিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।”
স্থানীয় উত্তেজনা ও ভবিষ্যৎ ব্যবস্থা
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মিরাকান্দা ও সলিথা গ্রামের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছে। গতকালের ওয়াজ মাহফিলের ঘটনা সেই বিরোধকে চরম পর্যায়ে নিয়ে গেছে।
প্রশাসন জানিয়েছে, সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর পাশাপাশি উভয় গ্রামের মানুষের মধ্যে শান্তি বজায় রাখতে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ফরিদপুরের নগরকান্দায় মাইকে ঘোষণার মাধ্যমে সংঘর্ষে শতাধিক মানুষের অংশগ্রহণ এবং এতজনের আহত হওয়ার ঘটনা এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে। এলাকাবাসী ও প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে এই ধরনের উত্তেজনা কমিয়ে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
Latest News Of Signalbd.com