দেশজুড়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব আবারও উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২ জনের মৃত্যু ও ৩৯৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগস্ট মাসে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্য
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২ জন। পাশাপাশি নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৯৫ জন রোগী। এই তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, মৃতদের দুজনই পুরুষ। আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই ঢাকা মহানগরের বাইরের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা, যা ইঙ্গিত করে—ডেঙ্গুর প্রকোপ রাজধানী ছাড়িয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে।
আগের বছরের তুলনায় পরিস্থিতির অবনতি
চলতি বছর জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২২ হাজার ৬৫ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৮৬ জনের, যাদের মধ্যে ৪৯ জন পুরুষ ও ৩৭ জন নারী।
বিশ্লেষকদের মতে, আগের বছরের তুলনায় চলতি বছরের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। গত বছরের তুলনায় এ বছর বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র বেড়ে গেছে, যা ডেঙ্গুর বিস্তারকে ত্বরান্বিত করেছে।
রোগীর চাপ বাড়ছে হাসপাতালগুলোতে
রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল, বিশেষ করে সরকার পরিচালিত হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীদের চাপ বেড়েই চলেছে। শিশু ও বয়স্ক রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানান, “রোগীর চাপ এতটাই বেড়েছে যে এক বিছানায় দুজন করে রোগী রাখতেও বাধ্য হচ্ছি। অনেক রোগীর প্লাটিলেট ড্রপ করছে, যেটা বেশি জটিল অবস্থার নির্দেশ দেয়।”
সংক্রমণ ঠেকাতে প্রয়োজন সচেতনতা
ডেঙ্গু মোকাবিলায় প্রশাসনের পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকদেরও সতর্ক থাকা জরুরি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘরের আশপাশ পরিষ্কার রাখা, ফুলের টব, ড্রেন, পাত্র বা যেকোনো স্থানে জমে থাকা পানি সরিয়ে ফেলা এখন সময়ের দাবি।
এছাড়াও প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় মশা নিধনের স্প্রে ব্যবহার করা, ফুলহাতা জামা-কাপড় পরা এবং মশারি ব্যবহার করা ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
স্থানীয় সরকার ও সিটি করপোরেশনের করণীয়
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে মশা নিধনে প্রতিদিন ওষুধ ছিটানোর দাবি করা হলেও বাস্তবে অনেক এলাকাবাসী তা অনুভব করছেন না। অনেক জায়গায় অভিযোগ উঠেছে— ওষুধ ছিটানো হলেও তা কার্যকর নয়, কারণ স্প্রে পুরনো এবং ঠিকমতো ছিটানো হচ্ছে না।
স্থানীয় সরকার বিভাগ ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। নগরবাসী দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে চলেছেন।
বিশেষজ্ঞ মতামত: জরুরি পরিকল্পনা ছাড়া বিপর্যয় এড়ানো কঠিন
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু এখন আর মৌসুমি নয়, বরং এটি বাংলাদেশে স্থায়ী স্বাস্থ্য সংকটে পরিণত হয়েছে। তাই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. শামসুজ্জামান বলেন, “শুধু মৌসুমে ওষুধ ছিটিয়ে ডেঙ্গু রোধ করা যাবে না। সারা বছর ধরে সচেতনতা, গবেষণা এবং স্থানীয় প্রশাসনের কড়া নজরদারি প্রয়োজন।”
সারসংক্ষেপ
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আবারও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে, যা পুরো দেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ এবং নাগরিকদের সচেতনতা—উভয়ই এখন জরুরি।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি কীভাবে গড়াবে, তা নির্ভর করছে প্রশাসনের কার্যকর উদ্যোগ এবং জনগণের অংশগ্রহণের ওপর।
এম আর এম – ০৬৮২, Signalbd.com



