ছাত্র-জনতা ঢাকায় আনতে সরকার ভাড়া করল ৮ জোড়া বিশেষ ট্রেন

২০২৫ সালের ৫ আগস্ট ঢাকা শহরে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ’ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য ছাত্র-জনতাকে ঢাকায় আনতে সরকার ৮ জোড়া বিশেষ ট্রেন ভাড়া করেছে। বিভিন্ন জেলার শত শত ছাত্র ও জনতা দুপুরের মধ্যে ট্রেনে উঠে রাজধানীতে আসবেন। সমাবেশ শেষে তাদের পুনরায় গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া হবে। এই ট্রেন ভাড়ার ব্যয় বহন করছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, যা প্রায় ৩০ লাখ ৪৬ হাজার টাকা।
বিস্তারিত সংবাদঃ
৫ আগস্ট ২০২৫ তারিখে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ৪৬তম বর্ষপূর্তির দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করতে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ’ নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে। এই সমাবেশে দেশের বিভিন্ন জেলার ছাত্র-জনতা ও সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করবেন। যাতে উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য সরকার বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, ওইদিন সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে দেশের আটটি জেলা থেকে মোট ৮ জোড়া (১৬টি) ট্রেন বিশেষভাবে ভাড়া করা হয়েছে। এগুলো দিয়ে ছাত্ৰ-জনতাকে ঢাকায় আনা হবে এবং সমাবেশ শেষে আবার তাদের নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। ট্রেন ভাড়ার মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ ৪৬ হাজার টাকা, যা বহন করবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
ট্রেন ভাড়ার পেছনের কারণ ও প্রক্রিয়া
রেলওয়ে সূত্র থেকে জানা গেছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদফতর ৩ আগস্ট রোববার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দিয়েছিল, যেখানে সরকারকে ছাত্র-জনতা ঢাকায় আনতে ট্রেন ভাড়া দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিক রেলপথ মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি প্রেরণ করে। পরে রেলপথ মন্ত্রণালয় বিশেষ ট্রেন পরিচালনার অনুমোদন দেয়।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, এসব বিশেষ ট্রেন নির্ধারিত ভাড়ায় চলবে এবং নিয়মিত রেলসেবায় কোনো বিঘ্ন ঘটবে না। অর্থাৎ, ট্রেনের রুট ও সময়সূচী এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে যাতে দৈনন্দিন যাত্রীদের জন্য রেল যোগাযোগে সমস্যা না হয়।
৮ জোড়া ট্রেনের বিশদ তথ্য
উৎস জেলা/স্থান | কোচ সংখ্যা | আসন সংখ্যা | নির্ধারিত ভাড়া (টাকা) |
---|---|---|---|
চট্টগ্রাম | ১৬ | ৮৯২ | ৭,০০,০০০+ |
জয়দেবপুর (গাজীপুর) | ৮ | ৭৩৬ | ৭২,৫০০ |
নারায়ণগঞ্জ | ১০ | ৫১০ | ৫৬,৫০০ |
নরসিংদী | ১২ | ৬৫২ | ৯৫,০০০ |
সিলেট | ১১ | ৫৪৮ | ৩,২৩,০০০ |
রাজশাহী | ৭ | ৫৪৮ | ৪,৮৫,০০০ |
রংপুর | ১৪ | ৬৩৮ | ১০,৫১,০০০ |
ভাঙ্গা (ফরিদপুর) | ৭ | ৬৭৬ | ২,৬১,০০০ |
রাজনৈতিক সমাবেশ ও কর্মসূচির গুরুত্ব
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বড় ধরনের কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। বিকেল ৫টায় ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ উপস্থাপন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এতে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করবেন। কর্মসূচি দিনে দীর্ঘস্থায়ী এবং সরকার সেটিকে সফল করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে।
ট্রেন ভাড়া নিয়ে সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়া
বিশেষ ট্রেন ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্তটি নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। অনেকের প্রশ্ন, সাধারণ রেল যাত্রীদের জন্য ট্রেন কেন ভাড়া দিয়ে নিযুক্ত করা হলো? এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফাহিমুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, “রাজনৈতিক দল কিংবা সরকারি কোনো মন্ত্রণালয়ের আবেদনের ভিত্তিতে আমরা বিশেষ ট্রেন ভাড়া দিয়ে থাকি। এবার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে আবেদন এসেছে, তাই আমরা ট্রেন ভাড়া দিয়েছি। এই ভাড়া থেকে রেলওয়ের ক্ষতি হয় না, বরং স্বাভাবিকের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি ভাড়া আদায় করা হয়।”
তাঁর কথায়, “এ ধরনের বিশেষ ট্রেন সাধারণ ট্রেনের রুটে বিঘ্ন ঘটাবে না। আমরা যথাযথ পরিকল্পনা নিয়ে এই পরিষেবাগুলো চালাই।”
ট্রেন ভাড়ার অর্থায়ন এবং সুবিধা
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এই ৮ জোড়া ট্রেন ভাড়ার সম্পূর্ণ ব্যয় বহন করা হচ্ছে। সরকারের তরফ থেকে এই কর্মসূচির মাধ্যমে যাতে দেশের যুব সমাজ ও ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণ বাড়ে, সেজন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বিশেষ ট্রেনগুলো দেশের বড় বড় জেলা থেকে আসবে, যা ছাত্র-জনতাকে সময়মতো রাজধানীতে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সুবিধাজনক হবে। এছাড়া সমাবেশ শেষে পুনরায় তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকায় এটি জনসাধারণের জন্য নিরাপদ ও সুষ্ঠু পরিবহন ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
দেশের রেল পরিষেবায় রাজনৈতিক ও সরকারি সমর্থনের ভূমিকা
বাংলাদেশের রেলওয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিশেষ করে দূরদূরান্তের জেলাগুলোর সঙ্গে রাজধানীসহ বড় শহরের সংযোগ রেলেই বেশি নির্ভরশীল। বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি ও সমাবেশে অংশগ্রহণের জন্য সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো ট্রেন ভাড়া দিয়ে থাকে।
সরকারি উৎস থেকে জানা যায়, এই ধরনের বিশেষ ট্রেন পরিচালনা সাধারণত রাজনৈতিক দল বা সরকারি সংগঠনের আবেদনের ভিত্তিতে করা হয়। এর ফলে বৃহৎ জনসমাবেশে সময়মতো মানুষের যাতায়াত নিশ্চিত হয় এবং জনসাধারণের সুবিধা হয়।
সার্বিক গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
জুলাই গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। প্রতিবছর এর বর্ষপূর্তি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। এর মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইকে স্মরণ করা হয় এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেশের ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন করা হয়।
সরকারের তরফ থেকে ছাত্র-জনতাকে বৃহত্তর অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতে ট্রেন ভাড়া দেওয়ার এই পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। এতে করে ঢাকায় জমায়েত হওয়া জনতা নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় পরিবহনে আসতে পারছে।
ভবিষ্যতে আরও বড় কর্মসূচি এবং জনসমাগম সহজ করার জন্য রেলওয়ের পরিষেবা উন্নয়নের পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হতে পারে। এতে করে দেশের যাত্রী পরিবহনে রেলওয়ের ভূমিকা আরো শক্তিশালী হবে।
MAH – 12114 , Signalbd.com