
রাজধানীর গুলশানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় ব্যবহার করে চাঁদাবাজির মাধ্যমে অবৈধ অর্থ আদায়ের অভিযোগে কেনা মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত জানে আলম অপুকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, দীর্ঘদিন ধরে তিনি আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায় করছিলেন। চাঁদাবাজির টাকা দিয়ে একটি দামি মোটরসাইকেল কিনেছিলেন তিনি। অবশেষে গোয়েন্দা পুলিশের বিশেষ অভিযানে সেই মোটরসাইকেল উদ্ধার হয়েছে।
গ্রেফতার অভিযান ও মোটরসাইকেল উদ্ধারের ঘটনা
ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (১ আগস্ট) সকালে রাজধানীর গোপীবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে জানে আলম অপুকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশের একটি বিশেষ টিম। পরে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিং এলাকার একটি বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলটি।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত অপু জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন যে, বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে যে অর্থ আদায় করা হয়েছিল, সেই টাকা দিয়েই মোটরসাইকেলটি ক্রয় করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে প্রতারণা
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, জানে আলম অপু নিজেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হিসেবে পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতেন। সংগঠনের নাম ব্যবহার করে তিনি ভুক্তভোগীদের বিশ্বাস অর্জন করতেন এবং পরবর্তীতে ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায় করতেন।
ডিবি কর্মকর্তাদের মতে, এই ঘটনার কারণে ছাত্র আন্দোলনের প্রকৃত ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে এবং সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছে।
এই ঘটনায় গ্রেফতারদের সংখ্যা
ডিএমপি সূত্র আরও জানায়, এই চাঁদাবাজি মামলায় এখন পর্যন্ত মোট ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মূল অভিযুক্ত অপুসহ অন্যদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পুলিশ বলছে, গ্রেফতার হওয়া অন্যদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করলে তদন্তে প্রভাব ফেলতে পারে।
এ ঘটনায় আরও কিছু নগদ অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। একইসঙ্গে ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্য সহযোগীদের চিহ্নিত ও গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
কীভাবে শুরু হয় চাঁদাবাজি
তদন্তে জানা গেছে, গত কয়েক মাস ধরে রাজধানীর গুলশান, বনানী ও মোহাম্মদপুর এলাকায় বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি, ব্যবসায়ী এবং শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অপু ও তার সহযোগীরা বিভিন্ন অজুহাতে টাকা আদায় করছিলেন। কেউ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার চালানোর হুমকি দিতেন তারা।
এই চক্রের কাছ থেকে ভুক্তভোগীরা একাধিকবার পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিলেন। অবশেষে অভিযোগের ভিত্তিতেই এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।
পুলিশের বক্তব্য
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা তদন্তে দেখেছি, সমন্বয়ক পরিচয় ব্যবহার করে বেশ কিছুদিন ধরে তারা চাঁদাবাজি করে আসছিল। গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্তের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আমরা মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছি।”
পুলিশ আরও জানায়, এই ঘটনার সাথে জড়িত অন্যদের ধরতে বিশেষ নজরদারি ও অভিযান অব্যাহত থাকবে।
সমাজে প্রভাব এবং উদ্বেগ
এ ধরনের ঘটনায় শিক্ষার্থী আন্দোলনের মতো সংবেদনশীল সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সাধারণ মানুষ প্রকৃত আন্দোলনকারীদের নিয়ে সন্দেহে পড়ে যায়, যা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
সামাজিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের প্রতারণার ঘটনা বেড়ে গেলে তরুণ প্রজন্মের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা নষ্ট হতে পারে। তাই দ্রুত তদন্ত শেষ করে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনা জরুরি।
পরবর্তী পদক্ষেপ
পুলিশ জানিয়েছে, নগদ অর্থ উদ্ধারের পাশাপাশি এই চক্রের ব্যাংক লেনদেন ও সম্পদের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। অভিযুক্তদের মোবাইল ফোন ও সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, এই তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা পুরো বিষয়টি নিয়ে কঠোর অবস্থানে থাকবে।
শেষ কথা
এই ঘটনার পর সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। যেকোনো আন্দোলন বা সংগঠনের পরিচয়ে অর্থ দাবির ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় থানা বা গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রশ্ন হলো—সামাজিক আন্দোলনের নামে প্রতারণা রোধে কতটা কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং জনগণের আস্থা কত দ্রুত ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
এম আর এম – ০৬৫৮, Signalbd.com