ক্যালিফোর্নিয়া থেকে বড় খবর: মার্কিন নৌবাহিনীর এফ-৩৫ স্টিলথ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত, পাইলট বেঁচে গেলেন
মার্কিন নৌবাহিনীর অত্যাধুনিক এফ-৩৫ স্টিলথ ফাইটার জেট ক্যালিফোর্নিয়ার নেভাল এয়ার স্টেশন লিমোরের কাছে বিধ্বস্ত হয়েছে। বুধবার (৩০ জুলাই) সন্ধ্যা প্রায় ছয়টা ত্রিশ মিনিটের সময় ঘটে এই দুর্ঘটনা। তবে সুখবর হলো, পাইলট সময়মতো ইজেক্ট করতে সক্ষম হয়েছেন এবং কোনো ধরনের আঘাত না পেয়ে নিরাপদে রয়েছেন।
দুর্ঘটনার স্থান ও সময়: নেভাল এয়ার স্টেশন লিমোর, ক্যালিফোর্নিয়া
নেভাল এয়ার স্টেশন লিমোর, যা ফ্রেসনো শহর থেকে প্রায় ৪০ মাইল (৬৪ কিলোমিটার) দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত, মার্কিন নৌবাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিমানঘাঁটি। এখানে বহু এফ/এ-১৮ সুপার হর্নেট ও এফ-৩৫সি মডেলের যুদ্ধবিমান মোতায়েন রয়েছে। ঐ স্থানে বিধ্বস্ত এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের দুর্ঘটনা পুরো এলাকা জুড়ে আতঙ্ক তৈরি করেছে।
এফ-৩৫ স্টিলথ যুদ্ধবিমানের গুরুত্ব
এফ-৩৫ স্টিলথ ফাইটার হল বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক, দ্রুতগামী এবং গোপনীয়তাবাদী (স্টিলথ) যুদ্ধবিমানগুলোর মধ্যে একটি। এটি মার্কিন সামরিক বাহিনীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল এবং প্রযুক্তি-সমৃদ্ধ বিমান। সামরিক দক্ষতা, নজর এড়ানোর ক্ষমতা এবং অত্যাধুনিক সেন্সরগুলো এফ-৩৫-কে অন্য যেকোনো যুদ্ধবিমানের চেয়ে আলাদা করে তোলে।
দুর্ঘটনার কারণ ও তদন্ত
মার্কিন নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, দুর্ঘটনার সঠিক কারণ এখনও তদন্তাধীন। তবে প্রাথমিক অনুমান অনুযায়ী, যান্ত্রিক ত্রুটি বা টেকনিক্যাল গ্লিচ হতে পারে এই দুর্ঘটনার কারণ। এফ-৩৫-র ব্ল্যাক বক্স ও অন্যান্য ফ্লাইট ডেটা সংগ্রহ করে গভীর তদন্ত চলছে।
নৌবাহিনী দুর্ঘটনার পরিস্হিতি বুঝতে এবং ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি রোধে সকল ধরনের তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করছে। এছাড়াও, নেভাল এয়ার স্টেশন ও আশেপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত কোনো বেসামরিক জনসংখ্যা বা স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
পাইলটের প্রশিক্ষণ ও স্কোয়াড্রন পরিচিতি
দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটি স্ট্রাইক ফাইটার স্কোয়াড্রন VF-125 ‘রাফ রেইডার্স’ এর অধীনে ছিল। এই স্কোয়াড্রনটি মূলত ফ্লিট রিপ্লেসমেন্ট স্কোয়াড্রন (এফআরএস) হিসেবে কাজ করে, যেখানে নতুন পাইলট ও এয়ারক্রুদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ফলে, এই দুর্ঘটনা কেবল যান্ত্রিক ত্রুটিই নয়, প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়ার উপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা মহলের প্রতিক্রিয়া
এফ-৩৫ বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়ার পর মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ এ বিষয়ে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা বলেছেন, এফ-৩৫ যুদ্ধে ব্যবহৃত অত্যাধুনিক প্রযুক্তির নিরাপত্তা ও কার্যক্ষমতা নিয়ে পুনর্বিবেচনা করা হবে। বিশ্বে এখনো এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের নিরাপত্তা প্রোটোকল নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা চলছে, তাই এই দুর্ঘটনা নতুন করে নজর কাড়তে বাধ্য করেছে।
এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের বৈশিষ্ট্য ও প্রযুক্তিগত দিক
এফ-৩৫ ফাইটার জেট তিনটি মডেলে তৈরি হয়েছে — এফ-৩৫এ, এফ-৩৫বি এবং এফ-৩৫সি। এর মধ্যে এফ-৩৫সি মডেলটি নৌবাহিনীর জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। এই যুদ্ধবিমানটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর স্টিলথ প্রযুক্তি, যা রাডার থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে সক্ষম। এছাড়া, এটি উচ্চমানের সেন্সর, অত্যাধুনিক কম্পিউটার সিস্টেম এবং বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারে।
এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের মূল লক্ষ্য হলো আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে দমনক্ষমতা ও নজরদারিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনা। তবে, প্রযুক্তিগত জটিলতা ও ব্যয়বহুলতার কারণে এর কার্যক্রমে বিভিন্ন সময় সমস্যা দেখা দিয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়ায় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পূর্ববর্তী ঘটনা
এফ-৩৫ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। গত বছরও মার্কিন সামরিক বাহিনীতে এ ধরনের কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে। যদিও অনেক সময় পাইলট নিরাপদে বাঁচেন, কিন্তু এসব দুর্ঘটনা যুদ্ধবিমানের নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এফ-৩৫-এর প্রযুক্তিগত জটিলতা কিছু ক্ষেত্রে পাইলটদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই দুর্ঘটনা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে, যদিও এখনও পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর না পাওয়ায় তারা অনেকটা স্বস্তিতে রয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলেও এফ-৩৫ বিমানের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা জোরদার হয়েছে। অনেক দেশ এফ-৩৫ কিনে তাদের সামরিক শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে, তাই এই ধরনের দুর্ঘটনা তাদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
ভবিষ্যতে কি পদক্ষেপ নেওয়া হবে?
মার্কিন নৌবাহিনী ও প্রতিরক্ষা বিভাগ এফ-৩৫-এর নিরাপত্তা উন্নয়নে কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। দুর্ঘটনার পূর্ণ তদন্ত শেষে প্রযুক্তিগত ত্রুটি সমাধানের জন্য নতুন প্রোটোকল ও নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হবে। এছাড়া, পাইলটদের প্রশিক্ষণে আরও উন্নতি করা হবে যাতে তারা ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে দ্রুত ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
MAH – 12047, Signalbd.com



