
বিনা অনুমতিতে দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার কারণে গণপূর্ত অধিদপ্তরের পাঁচজন প্রকৌশলী এবং স্থাপত্য অধিদপ্তরের একজন স্থপতিকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। বিভাগীয় তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়।
বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের নাম ও পদবি
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন –
১. মনিরুজ্জামান মনি, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (সিভিল), গণপূর্ত অধিদপ্তর
২. আবদুল্লা আল মামুন, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (ই/এম), গণপূর্ত অধিদপ্তর
৩. রাহানুমা তাজনীন, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (সিভিল), গণপূর্ত অধিদপ্তর
৪. ফারহানা আহমেদ, নির্বাহী প্রকৌশলী (ই/এম), গণপূর্ত অধিদপ্তর
৫. মফিজুল ইসলাম, সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল), গণপূর্ত অধিদপ্তর
৬. শিরাজী তারিকুল ইসলাম, সহকারী স্থপতি, স্থাপত্য অধিদপ্তর
কীভাবে প্রমাণ হলো অভিযোগ
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য ছুটি নিয়ে বিদেশে যাওয়ার পর অনুমতি ছাড়াই তারা চাকরিস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে বিভাগীয় তদন্ত কমিটি অভিযোগ প্রমাণ করে। পরে সরকারি কর্ম কমিশনের মতামত এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর তাদের চাকরি থেকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হয়।
কার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ ছিল
মনিরুজ্জামান মনি ২০১৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরাল প্রোগ্রামের জন্য ছুটিতে ছিলেন। ছুটি শেষে ২০২৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে কর্মস্থলে যোগ না দেওয়ায় গত ২১ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে শাস্তি কার্যকর হয়।
আবদুল্লা আল মামুন ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পিএইচডি করার জন্য প্রেষণে ছিলেন। তবে ছুটি শেষে যোগদান না করায় গত ১৫ মে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।
রাহানুমা তাজনীন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইওমিং বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে উচ্চশিক্ষা নেন। ২০২৩ সালের ৩১ জুলাই ছুটির মেয়াদ শেষ হলেও তিনি যোগ দেননি। তাই চলতি বছরের ২ জুলাই তাকে বরখাস্ত করা হয়।
ফারহানা আহমেদ কানাডার রায়ারসন বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষা ছুটিতে ছিলেন। ছুটি শেষে বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত থাকার কারণে ৮ জুলাই তাকে বরখাস্ত করা হয়।
মফিজুল ইসলাম সাউথ ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএস কোর্সে অধ্যয়ন করেন। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর ছুটি শেষ হওয়ার পর থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার কারণে গত ২৭ জুলাই তাকে বরখাস্ত করা হয়।
অন্যদিকে, স্থাপত্য অধিদপ্তরের সহকারী স্থপতি শিরাজী তারিকুল ইসলাম ২০২২ সালের ১২ মে থেকে অনুমতি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকার অভিযোগে ২১ মে তাকে বরখাস্ত করা হয়।
কেন এই ব্যবস্থা
সরকারি চাকরিতে অনুপস্থিতি এবং শৃঙ্খলাভঙ্গ একটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। এ ধরনের ক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, দেশের উন্নয়নমূলক কাজে নিয়োজিত প্রকৌশলী ও স্থপতিদের এমন আচরণ প্রশাসনকে বিব্রত করেছে।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
গণপূর্ত ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে অন্য কর্মকর্তারা কর্মস্থলের শৃঙ্খলা রক্ষায় আরও সচেতন হবেন। এতে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়বে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকারি চাকরিতে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার বিরুদ্ধে এ ধরনের পদক্ষেপ ভবিষ্যতে একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করবে।
ভবিষ্যত পদক্ষেপ
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যারা অনুমতি ছাড়া দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকবেন, তাদের বিরুদ্ধে একইভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি দপ্তরে শৃঙ্খলা ও নীতি-নৈতিকতা বজায় রাখতে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
সারসংক্ষেপ
বিনা অনুমতিতে দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার দায়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দুই অধিদপ্তরের মোট ছয় কর্মকর্তা চাকরি হারালেন। এদের মধ্যে পাঁচজন প্রকৌশলী কর্মরত ছিলেন গণপূর্ত অধিদপ্তরে এবং একজন ছিলেন স্থাপত্য অধিদপ্তরের সহকারী স্থপতি।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অসদাচরণ ও পলায়নের অভিযোগে বিভাগীয় তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এম আর এম – ০৬১২ , Signalbd.com