বাংলাদেশ

বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স — প্রধান উপদেষ্টার স্পষ্ট বার্তা

বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদের জন্য কোনো স্থান নেই—এই মর্মে দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। দেশের নিরাপত্তা ও শান্তি রক্ষায় সরকারের অটল প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে তিনি জানিয়েছেন, সীমান্তের ভেতরে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে তাদের কার্যক্রম চালাতে দেয়া হবে না।

সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রধান উপদেষ্টা এই দৃঢ় বক্তব্য দিয়েছেন।

সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় জিরো টলারেন্স নীতি

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। আমরা এই বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। দেশের মাটিতে সন্ত্রাসবাদকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। সন্ত্রাসীদের নির্মূলের জন্য সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।”

বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কার্যক্রম নিয়ে তিনি এই পরিষ্কার বার্তাটি দেন, যা দেশের জনগণের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে।

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা

৪০ মিনিটের বৈঠকে দুই পক্ষ বাংলাদেশের শুল্কনীতি, বাণিজ্যিক স্বার্থ এবং অন্যান্য পারস্পরিক সহযোগিতা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় রাষ্ট্রদূত জ্যাকবসন বাংলাদেশের ব্যাপক সংস্কার প্রচেষ্টা এবং আগামী বছরের জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সরকারের উদ্যোগ ও সংস্কার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করি এবং আগামী নির্বাচনের সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে কাজ করব।”

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অগ্রগতি

প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐক্য গঠনের লক্ষ্যে গঠিত ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’-এর কাজকর্মের অগ্রগতির বিষয়ে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমি গভীর বিশ্বাস রাখি, কমিশন অত্যন্ত ফলপ্রসূ ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছে। অধ্যাপক আলী রিয়াজের নেতৃত্বে সদস্যরা দক্ষতার সঙ্গে দেশকে ঐক্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।”

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, যা ভবিষ্যতে দেশের সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির পথ সুগম করবে।

বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদের ইতিহাস ও বর্তমান পরিস্থিতি

বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই সন্ত্রাসবাদ দমনের লক্ষ্যে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে আসছে। ২০০৫ সালের দারুণ সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে সরকার বিভিন্ন পর্যায়ে সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের জন্য কঠোর নীতি প্রণয়ন করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম ব্যাপকভাবে কমে এসেছে।

বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠন যেমন: জামায়াতে উলমা-ই ইসলামী (জেএইআই), আনসার আল-ইসলাম এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে র‌্যাব এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।

সন্ত্রাসবাদের প্রভাব ও সরকারের প্রচেষ্টা

সন্ত্রাসবাদের ফলে দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। সরকার তাই সন্ত্রাস দমনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে।

গত বছর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা আরও জোরদার হয়েছে। বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় ও যৌথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাংলাদেশি বাহিনীকে সক্ষম করা হচ্ছে।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা ও চ্যালেঞ্জ

দেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার আরও আধুনিক প্রযুক্তি এবং প্রশিক্ষিত বাহিনী গঠনের পরিকল্পনা নিয়েছে। সীমান্তের কঠোর পাহারা, ভুয়া নথিপত্র যাচাই, এবং সন্দেহজনক কার্যক্রম দ্রুত শনাক্তের জন্য বিশেষ নজরদারি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

তবে, সন্ত্রাসবাদের শেকড় অনেক গভীর, এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের নিয়মিত আপডেট ও কৌশলগত পরিবর্তন প্রয়োজন।

বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরকার ও সমাজের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের এই স্পষ্ট বার্তা দেশের সুরক্ষা ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি করেছে।

আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব ও জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার মাধ্যমে বাংলাদেশ শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে অবিচল ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।

সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান নেই বাংলাদেশে — এই প্রতিজ্ঞা পূরণে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাবে।

 MAH – 12002, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button