রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো শনিবার (২৬ জুলাই) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায়। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের শীর্ষ নেতারা।
বৈঠকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ইস্যু নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়, যার মধ্যে ছিল শাপলা চত্বরের ঘটনা, মামলার অগ্রগতি, ক্ষতিপূরণ, এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে তদন্তের প্রস্তাব।
বৈঠকের প্রধান আলোচনার বিষয়বস্তু
হেফাজতের নেতারা বৈঠকে শাপলা চত্বরে ২০১৩ সালের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণের বিষয়টি তোলেন। তারা জানান, বহু পরিবার এখনও ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। এজন্য দ্রুত ক্ষতিপূরণের দাবি জানানো হয়।
এছাড়া শাপলা চত্বরে সংঘটিত ঘটনার যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত সরকারিভাবে সংগ্রহ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান তারা।
বৈঠকে হেফাজতের নেতারা আরও প্রস্তাব করেন যে, এ ঘটনার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থা বিশেষ করে জাতিসংঘের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ অনুসন্ধান করা হোক। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা নীতিগত সম্মতি জানান বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানিয়েছেন।
পুরনো মামলার অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা
আলোচনায় উঠে আসে গত দেড় দশকে হেফাজতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ কর্মীদের নামে দায়ের হওয়া অসংখ্য মামলার প্রসঙ্গ।
বৈঠকে জানানো হয়, এ ধরনের রাজনৈতিক প্রভাবে দায়ের করা অনেক মামলা বিচার ব্যবস্থাকে জটিল করেছে। এসব মামলার পর্যালোচনা ও প্রত্যাহার নিয়ে ইতিমধ্যে কিছু অগ্রগতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
হেফাজতের পক্ষ থেকে এসব মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করা হয়।
বৈঠকে কারা ছিলেন উপস্থিত
হেফাজত ইসলামের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা খুলিল আহমেদ কুরাইশী, মাওলানা সাজেদুর রহমান, মুফতি জসিম উদ্দিন, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা মহিউদ্দীন রব্বানী, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মুফতি বশির উল্লাহ এবং মুফতি কেফয়তুল্লাহ আজহারী।
অন্যদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বৈঠকে অংশ নেন।
শাপলা চত্বর ঘটনার প্রেক্ষাপট
২০১৩ সালের মে মাসে ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতের বৃহৎ সমাবেশে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় বহু হতাহতের অভিযোগ উঠে এবং বিষয়টি তখন দেশজুড়ে আলোচিত হয়।
হেফাজত ইসলামের দাবি, ওই ঘটনার ফলে সংগঠনের শত শত নেতাকর্মী মামলা ও নিপীড়নের শিকার হন। এই ঘটনাকে ঘিরেই গত এক দশক ধরে বহু আলোচনা ও বিতর্ক হয়ে আসছে।
জাতিসংঘের মাধ্যমে অনুসন্ধানের প্রস্তাব
বৈঠকে হেফাজতের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে জানানো হয়, শাপলা চত্বরের ঘটনার প্রকৃত চিত্র দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে হলে একটি নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক অনুসন্ধান অপরিহার্য। এজন্য জাতিসংঘের মাধ্যমে তদন্তের সুপারিশ করা হয়।
এই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি বিবেচনায় নেয়ার আশ্বাস দেন এবং বলেন, বিষয়টি জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় আলোচনা চলবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বৈঠক দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে চলা উত্তেজনা প্রশমনে সরকারের এই পদক্ষেপ ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
তারা মনে করেন, এই ধরনের সংলাপ অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক মীমাংসার সুযোগ তৈরি হবে।
পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে
বৈঠক শেষে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানানো না হলেও জানা গেছে, শাপলা চত্বরের ঘটনার ক্ষতিপূরণ ও মামলার অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য আবারও বৈঠক হতে পারে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই বৈঠককে কেন্দ্র করে শিগগিরই নতুন উদ্যোগ আসতে পারে, যা দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিবেশে প্রভাব ফেলতে পারে।
সারসংক্ষেপ
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও হেফাজত ইসলামের নেতাদের বৈঠক দেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
বৈঠক শুধু একটি আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ নয়, বরং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বাস্তবতায় গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।
তবে এই সংলাপের ফলাফল কী হবে, তা এখন দেশের জনগণ গভীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে।
এম আর এম – ০৫২৭, Signalbd.com



