ইসরায়েলের সঙ্গে তৃতীয়বারের মতো বড় ধরনের অস্ত্র চুক্তি বাতিল করেছে স্পেন সরকার। প্রায় ২০৭ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের এই চুক্তি ছিল উভয় দেশের মধ্যে চলমান সামরিক সহযোগিতার একটি অংশ। মন্ত্রিসভার বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে যেকোনো ধরনের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম, প্রযুক্তি ও সংশ্লিষ্ট উপকরণের আমদানি-রপ্তানি সম্পূর্ণভাবে স্থগিত থাকবে।
গাজার মানবিক সংকটের প্রেক্ষাপট
বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত সরাসরি গাজার বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে যুক্ত। ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ নিহত ও আহত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এরই মধ্যে নিন্দার ঝড় উঠেছে। এমন প্রেক্ষাপটে স্পেন সরকারের এই ঘোষণা ইসরায়েলের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করল।
আগের বাতিল হওয়া চুক্তিগুলো
এর আগে চলতি মাসেই স্পেন আরও দুটি বড় চুক্তি বাতিল করেছে। একটি ছিল প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ইউরোর, যার আওতায় ইসরায়েল থেকে রকেট লঞ্চার কেনার কথা ছিল। আরেকটি ছিল ২৮৭.৫ মিলিয়ন ইউরোর, যাতে ১৬৮টি অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল লঞ্চার স্পেনে ইসরায়েলের লাইসেন্সে তৈরি হওয়ার কথা ছিল। ক্রমান্বয়ে এই তিনটি চুক্তি বাতিল স্পেনের অবস্থানকে আরও সুস্পষ্ট করেছে।
পূর্ণাঙ্গ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা অনুমোদন
মন্ত্রিসভার সর্বশেষ বৈঠকে গৃহীত নীতিমালায় বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে যেকোনো ধরনের সামরিক বাণিজ্য স্থগিত থাকবে। স্পেনের অর্থমন্ত্রী কার্লোস কুয়ের্পো এ বিষয়ে বলেন, “এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। এটি সাহসী ও অগ্রণী পদক্ষেপ, যা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করছে।”
প্রধানমন্ত্রী সানচেজের অবস্থান
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, গাজার হত্যাযজ্ঞ বন্ধে তার সরকার আরও কঠোর অবস্থান নেবে। তিনি বলেছেন, বিদ্যমান প্রতিরক্ষা চুক্তি আইনকে আরও শক্তিশালী করা হবে এবং ইসরায়েলের সঙ্গে নতুন কোনো সামরিক সহযোগিতা করা হবে না। তার এই ঘোষণা দেশটির জনগণ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মধ্যে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
স্পেনের এই পদক্ষেপকে অনেক আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক সাহসী উদ্যোগ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোও স্পেনের সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনায় বসেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ ধরনের সিদ্ধান্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভেতরে আরও বিস্তৃত প্রভাব ফেলতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্পেনের এই সিদ্ধান্ত মূলত গাজার মানবিক পরিস্থিতি বিশ্বমঞ্চে আরও জোরালোভাবে তুলে ধরার কৌশল। তাদের মতে, এ ধরনের পদক্ষেপ শুধু সামরিক বাণিজ্যে প্রভাব ফেলবে না, বরং ইসরায়েলের কূটনৈতিক অবস্থানকেও সংকটে ফেলবে।
প্রভাব ও সম্ভাবনা
স্পেন যদি তার অবস্থান অব্যাহত রাখে, তবে ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশ একই পথে হাঁটতে পারে। এতে ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক অস্ত্র বাজার সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে, ফিলিস্তিনের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আরও বাড়বে। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে নতুন ভারসাম্য তৈরি হতে পারে।
স্পেনের সিদ্ধান্ত নিছক অর্থনৈতিক বা সামরিক চুক্তি বাতিল নয়; বরং এটি আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে এক নতুন বার্তা। প্রশ্ন উঠছে, ইউরোপের অন্য দেশগুলো কি স্পেনের এই পথ অনুসরণ করবে, নাকি ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার দিকেই ঝুঁকবে? সময়ই বলে দেবে, তবে গাজার চলমান পরিস্থিতি ইউরোপের রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলছে—এটা এখন নিশ্চিত।
এম আর এম – ১৫৩১,Signalbd.com



