ইসরায়েলের কাছে ৭৪০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রিতে মার্কিন অনুমোদন

ওয়াশিংটন: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি ইসরায়েলের কাছে প্রায় ৭৪০ কোটি ডলারের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে। শুক্রবার এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। তবে ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা এ বিষয়ে আরও তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত বিক্রয় স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিক্রয় প্যাকেজে কী আছে?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত এই প্যাকেজে ৬৭৫ কোটি ডলারের গোলাবারুদ, গাইডেন্স ও ফিউজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বোয়িংসহ কয়েকটি বড় মার্কিন প্রতিরক্ষা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এই সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করবে।
এছাড়া প্যাকেজের আওতায় ইসরায়েলের কাছে ৬৬ কোটি ডলারের হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির পরিকল্পনা রয়েছে। এই ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করবে লকহিড মার্টিনসহ অন্যান্য মার্কিন প্রতিষ্ঠান।
নেতানিয়াহুর ওয়াশিংটন সফর
এই ঘোষণার সময়টিও তাৎপর্যপূর্ণ। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি ওয়াশিংটনে এক গুরুত্বপূর্ণ সফর শেষ করেছেন। সফরে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এবং কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
ডেমোক্র্যাটদের আপত্তি
নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য গ্রেগরি মেকস, যিনি প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সদস্য, এই অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “অস্ত্র বিক্রির মতো বড় প্রকল্পের অনুমোদনের আগে কংগ্রেসে বিস্তারিত পর্যালোচনা করার যে রীতি রয়েছে, তা ভঙ্গ করা হয়েছে। এটি একটি দুর্ভাগ্যজনক সিদ্ধান্ত।”
ডেমোক্র্যাটরা মনে করেন, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে কংগ্রেসকে যথাযথ সম্মান দেওয়া হয়নি এবং তারা আরও স্বচ্ছতা দাবি করছেন।
হোয়াইট হাউসের প্রতিক্রিয়া
এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত কংগ্রেসের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী সংঘাতের কারণ হতে পারে।
অতীতের অস্ত্র বিক্রির প্রসঙ্গ
উল্লেখ্য, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইসরায়েলের কাছে ৮০০ কোটি ডলারের সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছিল। ঐ সময় কংগ্রেস এই প্রস্তাব পর্যালোচনা করেছিল এবং বেশ কিছু প্রশ্ন তুলেছিল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক মধ্যপ্রাচ্যের ভৌগোলিক ও কূটনৈতিক স্থিতিশীলতায় প্রভাব ফেলতে পারে। ডেমোক্র্যাটরা বিশেষ করে গাজা উপত্যকা এবং ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর উপর ইসরায়েলের সামরিক অভিযান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এই অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত মার্কিন কংগ্রেসে বিতর্ক তৈরি করেছে। ডেমোক্র্যাটদের আপত্তি ও কংগ্রেসের আরও পর্যালোচনার দাবি সত্ত্বেও ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতিতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। এখন দেখার বিষয়, এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে ইসরায়েল-মার্কিন সম্পর্ক এবং মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতিতে কী প্রভাব ফেলে।
আরও পড়ুন