মূল্যস্ফীতির চাপ, নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে রাজধানীতে ফ্ল্যাট বিক্রি ও বুকিং গত এক বছরে প্রায় ৩৫ শতাংশ কমে গেছে। রিয়েল এস্টেট খাতের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিশেষত ইস্পাত ও সিমেন্টের মতো কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির কারণে ফ্ল্যাটের নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ।
ড্যাপ ও নির্মাণ খরচ বৃদ্ধির প্রভাব
রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারদের মতে, নতুন বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) কার্যকর হওয়ায় ভবন নির্মাণে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এটি ভবন নির্মাণের উচ্চতা ও অনুমোদন প্রক্রিয়ায় জটিলতা সৃষ্টি করেছে, যা সরাসরি নির্মাণ খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
গ্রীন হাট রিয়েল এস্টেটের পরিচালক মেজবা উদ্দিন মারুফ জানিয়েছেন, তাদের কোম্পানির মাসিক ফ্ল্যাট বিক্রির হার ৫ থেকে ৮ ইউনিট থেকে কমে বর্তমানে ২ ইউনিটে নেমে এসেছে। অন্যদিকে, আক্তার এপিএল প্রপার্টিজের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. সাজ্জাদ মাসুদ বলেন, নির্মাণ সামগ্রীর ব্যয় বৃদ্ধি ও ড্যাপের কারণে তাদের নির্মাণ ব্যয় ২৫ শতাংশ বেড়ে গেছে।
উচ্চমূল্যের ফ্ল্যাটের বিক্রিতে পতন
বিশেষত ১০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের ফ্ল্যাটের বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে। ধানমন্ডি ও গুলশানের মতো অভিজাত এলাকায় ১৬ থেকে ৩২ কোটি টাকার ফ্ল্যাটের চাহিদাও হ্রাস পেয়েছে বলে জানিয়েছেন র্যাংকন রিয়েল এস্টেটের বিক্রয় প্রধান দেবব্রত রায়।
ড্যাপ সংশোধনের দাবি
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)-এর সহ-সভাপতি আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘নতুন ড্যাপ অনুযায়ী ঢাকায় ৮ তলার পরিবর্তে ৫ তলার ভবন নির্মাণ করতে হচ্ছে। এটি ডেভেলপারদের জন্য আর্থিকভাবে অসম্ভব হয়ে পড়ছে।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, ড্যাপ সংশোধন করা হলে নির্মাণ খরচ ও ফ্ল্যাটের দাম কমানো সম্ভব হতে পারে।
ক্রেতাদের সংকট
ফ্ল্যাটের উচ্চমূল্যের কারণে মধ্যবিত্ত ক্রেতারা ক্রয়ক্ষমতা হারাচ্ছেন। মেলায় আগত অনেকেই ১ কোটি টাকার নিচে ফ্ল্যাট খুঁজে না পেয়ে হতাশ হয়েছেন।
রিহ্যাব মেলা ও ভবিষ্যৎ আশাবাদ
আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চলমান রিহ্যাব মেলায় ২২০টি স্টল রয়েছে, যা শুক্রবার পর্যন্ত চলবে। ড্যাপ সংশোধন এবং ব্যাংক ঋণের সুদের হার হ্রাসের মাধ্যমে বাজারের স্থবিরতা কাটানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী।