
উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তে দগ্ধ রোগীদের জন্য জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে শুরু হয়েছে জরুরি চিকিৎসা। ইতোমধ্যে পজিটিভ গ্রুপের রক্ত মজুত থাকলেও নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের সংকট দেখা দিয়েছে।
জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নেগেটিভ ব্লাড গ্রুপের ডোনার সংকট
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ শতাধিক রোগী এখন চিকিৎসাধীন আছেন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। তাদের অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন রোগীর জরুরি ভিত্তিতে রক্ত প্রয়োজন, বিশেষ করে নেগেটিভ ব্লাড গ্রুপের।
চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পজিটিভ গ্রুপের রক্ত এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত মজুত থাকলেও নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত খুবই অপ্রতুল। ফলে রোগীদের জীবন বাঁচাতে সাধারণ মানুষের এগিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি।
কারা দিচ্ছেন তথ্য, কেন এই রক্ত সংকট?
জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেছেন, “আমাদের এখানে বর্তমানে ৬০ জন দগ্ধ রোগী ভর্তি আছেন। আরও ১০-১৫ জনকে চিকিৎসা দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু রক্ত সংকটের কারণে অনেককেই পর্যাপ্ত চিকিৎসা দিতে সমস্যা হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “রক্ত ছাড়া বার্ন রোগীর চিকিৎসা সম্ভব নয়। বিশেষ করে যেসব রোগীর শরীরের বিশাল অংশ দগ্ধ হয়েছে, তাদের রক্তের প্রয়োজন অনেক বেশি। এদের মধ্যে কিছু রোগীর রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হওয়ায় আমরা সাধারণ রক্ত ব্যাংক থেকে তা সংগ্রহ করতে পারছি না।”
বিমান দুর্ঘটনার পর থেকেই বাড়ছে রোগীর চাপ
সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই দগ্ধ রোগীদের বার্ন ইনস্টিটিউটে আনা শুরু হয়। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সেখানে ভর্তি হয়েছেন অন্তত ৭১ জন। এর বাইরে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ আশপাশের হাসপাতালগুলোতেও শতাধিক দগ্ধ রোগী ভর্তি রয়েছেন।
তবে মুমূর্ষু ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা রোগীদের বার্ন ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হচ্ছে এবং সেখানেই মূলত রক্তের সবচেয়ে বেশি চাহিদা দেখা দিয়েছে।
নেগেটিভ ব্লাড গ্রুপ: কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ?
বাংলাদেশে রক্তদাতাদের মধ্যে নেগেটিভ ব্লাড গ্রুপের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে খুবই কম। সাধারণত AB-, B-, A-, O- → এই গ্রুপগুলোই সবচেয়ে দুষ্প্রাপ্য।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রায় ৭০–৮০ শতাংশ মানুষের রক্ত পজিটিভ হলেও মাত্র ২০ শতাংশ মানুষের রক্ত নেগেটিভ। ফলে দুর্ঘটনা বা অপারেশনের সময় এই গ্রুপের রক্ত সংগ্রহ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে।
যে কারণে এখন জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট থেকে বারবার জানানো হচ্ছে— যদি আপনার রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হয়, দয়া করে দেরি না করে ইনস্টিটিউটে চলে আসুন এবং রক্ত দিন।
জরুরি যোগাযোগ: কোথায় যেতে হবে, কী করবেন?
বার্ন ইনস্টিটিউটের ইমার্জেন্সি হটলাইন চালু করা হয়েছে: ০১৯৪৯০৪৩৬৯৭। যেকোনো নেগেটিভ রক্তদাতা এই নম্বরে ফোন করে যোগাযোগ করতে পারবেন।
রক্তদাতাদের অনুরোধ করা হচ্ছে:
- রক্তদানের পূর্বে খাবার খেয়ে আসুন
- রক্তদানে ইচ্ছুক হলে জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখুন
- নেগেটিভ গ্রুপের রক্তদাতা হলে জরুরি ভিত্তিতে যোগাযোগ করুন
- হাসপাতালে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে রক্তদান করুন
চিকিৎসা ও অবস্থা: রোগীদের অনেকেই সংকটাপন্ন
বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি অনেক রোগীর শরীরের ৫০ শতাংশের বেশি অংশ দগ্ধ হয়েছে। তাদের বেশিরভাগেরই স্কিন গ্রাফটিং, আইসিইউ সাপোর্ট এবং একাধিক রক্ত ট্রান্সফিউশনের প্রয়োজন।
চিকিৎসকরা বলছেন, “প্রতিটি মিনিট গুরুত্বপূর্ণ। যদি রক্ত না পাওয়া যায়, তবে রোগীর শরীরে অক্সিজেন সরবরাহে ঘাটতি হবে এবং তাদের অবস্থা আরও খারাপ হবে।”
নাগরিকদের প্রতি অনুরোধ: এগিয়ে আসুন মানবতার খাতিরে
বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, “মানবিক দিক বিবেচনা করে আপনারা যাদের নেগেটিভ রক্তের গ্রুপ রয়েছে, তারা দয়া করে এগিয়ে আসুন। একটি রক্তদান একটি জীবন বাঁচাতে পারে।”
এছাড়াও ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ প্রশাসন থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে, হাসপাতালে যেন অযথা ভিড় না করা হয়। শুধুমাত্র রক্তদাতা বা রোগীর পরিবারের সদস্যরা যেন হাসপাতালে প্রবেশ করেন।
উত্তরার ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে রক্তের চাহিদা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। পজিটিভ গ্রুপের রক্ত মজুত থাকলেও নেগেটিভ গ্রুপের রক্তে রয়েছে ঘাটতি। তাই মানবিক বিবেচনায় নেগেটিভ রক্তদাতাদের এখনই এগিয়ে আসা দরকার। একটি রক্তদান বাঁচাতে পারে একটি মূল্যবান জীবন।
এম আর এম – ০৪৪২, Signalbd.com