অর্থনীতি

পর্ষদ ভেঙে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিল বাংলাদেশ ব্যাংক

অর্থনৈতিক সংকট, সুশাসনের ঘাটতি ও আমানতকারীদের স্বার্থ বিঘ্নিত হওয়ার অভিযোগে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বুধবার (৯ এপ্রিল) এক চিঠির মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।

কেন ভেঙে দেওয়া হলো পর্ষদ?

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ফলে:

  • মূলধন ও প্রভিশন ঘাটতি প্রকট হয়েছে
  • শ্রেণিকৃত বিনিয়োগ ও পুঞ্জীভূত ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে
  • তারল্য সংকট ও ব্যবস্থাপনাগত অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে
  • পর্ষদের নীতিনির্ধারণ দুর্বলআচরণ আমানতকারীদের স্বার্থবিরোধী

এসব কারণে ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ অনুযায়ী পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

নতুন দায়িত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক

পর্ষদ বাতিলের পাশাপাশি, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মজিবুর রহমান–কে নতুনভাবে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালনে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এটি মূলত ব্যাংকটির কার্যক্রমে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য গৃহীত পদক্ষেপ।

দীর্ঘদিনের সংকটে থাকা একটি ব্যাংকের ইতিহাস

আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, এটি শুরু থেকেই নানা সংকটে জর্জরিত ছিল:

  • ১৯৮৭ সালে যাত্রা শুরু করে আল-বারাকা ব্যাংক নামে
  • ১৯৯৪ সালেই ‘সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক’ হিসেবে চিহ্নিত
  • ২০০৪ সালে নাম বদলে হয় ওরিয়েন্টাল ব্যাংক
  • ২০০৬ সালে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে পরিচালনা পর্ষদ বাতিল
  • ২০০৫-০৬ সালে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে হয় ৩৪টি মামলা
  • ২০০৮ সালে নাম পরিবর্তন করে করা হয় আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক
  • বিদেশি বিনিয়োগ আসলেও মামলা ও খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াতে ব্যর্থ

ব্যর্থ পুনর্গঠন ও ফের সরকারি হস্তক্ষেপ

বিদেশি মালিকানায় গেলেও ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। আমানতকারীদের আস্থা হারানোর পাশাপাশি খেলাপি ঋণ ও মামলা–মোকদ্দমার বেড়াজালে পড়ে কার্যত অচল হয়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। তাই বাংলাদেশ ব্যাংক আবারও সরাসরি হস্তক্ষেপ করে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ হাতে নেয়

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button