
আফগানিস্তানের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী মোল্লা খায়রুল্লাহ খায়েরখা বলেছেন, ১৫ আগস্ট আফগান জাতির ইতিহাসে গর্ব ও স্বাধীনতার প্রতীক। এই দিনটি শুধু রাজনৈতিক পরিবর্তনের নয়, বরং দেশের ধর্ম, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং জাতীয় মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দিন বলেও তিনি অভিহিত করেছেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমেরিকা ও তার মিত্ররা বিশ বছরের দীর্ঘ দখলদারিত্বে আফগানিস্তানের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ে আঘাত হেনেছে। একইসাথে তারা এমন এক অর্থনৈতিক নির্ভরতার শৃঙ্খল তৈরি করেছিল, যা থেকে মুক্তি পাওয়া ছিল দেশের জন্য জরুরি।
দখলদারিত্বের ক্ষতিকর প্রভাব
সোমবার (১১ আগস্ট) রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আরটিএ-কে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে মোল্লা খায়রুল্লাহ বলেন,
“দখলদাররা শুধু ভূখণ্ড দখল করে না, তারা একটি জাতির আত্মপরিচয়কেও ক্ষতবিক্ষত করে। তারা ধর্ম, সংস্কৃতি, শিক্ষা ও অর্থনীতিকে দুর্বল করে দেয়, যাতে দেশটি চিরকাল তাদের ওপর নির্ভরশীল থাকে।”
তিনি বলেন, আমেরিকা ও তার মিত্ররা আফগানিস্তানে বিদেশি সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে, স্থানীয় সাহিত্য ও ঐতিহ্যকে অবমূল্যায়ন করেছে এবং দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে।
১৫ আগস্ট : স্বাধীন ইসলামী শাসনের সূচনা
মোল্লা খায়রুল্লাহ বলেন, ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট কাবুলে তালেবান প্রবেশের মধ্য দিয়ে মার্কিন দখলদারিত্বের অবসান ঘটে। সেদিনই আফগানিস্তানে “স্বাধীন ইসলামী শাসন” প্রতিষ্ঠিত হয়, যা দেশের জনগণের কাছে মুক্তি ও গর্বের প্রতীক হয়ে আছে।
তার ভাষায়,
“১৫ আগস্ট কেবল একটি তারিখ নয়—এটি আফগানদের আত্মমর্যাদা ও স্বনির্ভরতার ঘোষণা। এই দিন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, দেশ অন্য কেউ নয়, তার নাগরিকরাই গড়ে তোলে।”
দেশ পুনর্গঠনে জনগণের ভূমিকা
তিনি বলেন, আফগানরা বুঝে গেছে যে দেশের উন্নয়ন কেবল নিজেরাই করতে পারে। বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরশীলতার যুগ শেষ হওয়া উচিত।
গত চার বছরে আফগানিস্তানে পর্যটন খাতে উন্নতি, ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষণ ও সংস্কার উল্লেখযোগ্য সাফল্য হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
পর্যটন খাতের অগ্রগতি
মোল্লা খায়রুল্লাহ জানান, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত আফগানিস্তানে পর্যটন শিল্প নতুন করে প্রাণ ফিরিয়ে পাচ্ছে। ঐতিহাসিক শহর হেরাত, বামিয়ান ও গজনিতে সংরক্ষণ কার্যক্রম চলছে। তিনি উল্লেখ করেন, “আমরা চাই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানুক, তাদের দেশে সমৃদ্ধ ইতিহাস ও গৌরবময় সংস্কৃতি রয়েছে।”
আফগানিস্তানের স্বাধীনতার ইতিহাস
আফগানিস্তান বহুবার বিদেশি আক্রমণের শিকার হয়েছে—ব্রিটিশ সাম্রাজ্য, সোভিয়েত ইউনিয়ন, এবং সর্বশেষ মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী।
- ১৯১৯ সালের ১৯ আগস্ট তৃতীয় অ্যাংলো-আফগান যুদ্ধে ব্রিটিশদের পরাজিত করে আফগানিস্তান পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে।
- ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত বাহিনী আফগানিস্তান ত্যাগ করে।
- ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে তালেবান আবার ক্ষমতায় আসে।
এই ইতিহাসে ১৫ আগস্ট এখন যুক্ত হয়েছে নতুন এক জাতীয় মুক্তির অধ্যায় হিসেবে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
তালেবানের ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর আন্তর্জাতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
- কিছু দেশ মানবাধিকার ও নারীর শিক্ষা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে।
- অন্যদিকে, কিছু দেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার পথে এগিয়েছে, বিশেষ করে আঞ্চলিক শক্তিগুলো।
মোল্লা খায়রুল্লাহ এ বিষয়ে বলেন,
“আমাদের শাসন ব্যবস্থার সমালোচনার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। আমরা ইসলামী আইন মেনে দেশ চালাচ্ছি এবং জনগণের কল্যাণে কাজ করছি।”
ইমারাতে ইসলামিয়ার অর্জন
মন্ত্রী জানান, বর্তমান সরকারের অর্থনৈতিক আত্মনির্ভরতা, কৃষি উন্নয়ন, অবকাঠামো পুনর্গঠন, ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা—এগুলোই প্রধান সাফল্য। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই অর্জনগুলো স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
- আফগান সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের আন্তর্জাতিক প্রচার
- প্রাচীন স্থাপনা ও ঐতিহাসিক নিদর্শনের আরও সংরক্ষণ
- শিক্ষা ও পর্যটন খাতের উন্নয়ন
- অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জন
মোল্লা খায়রুল্লাহ বলেন,
“আমরা চাই, আগামী প্রজন্ম জানুক তারা কেমন একটি ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এক নতুন যুগের সূচনা করলেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এখনও বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। বিশেষ করে নারীর অধিকার, মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও অর্থনৈতিক অবরোধ—এসব ইস্যুতে ভবিষ্যৎ পথ নির্ভর করবে।
MAH – 12277 , Signalbd.com