বাংলাদেশ

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ‘দুর্বল’ উল্লেখ করে পদত্যাগ চাইলেন

Advertisement

ঢাকা, ১৭ জুলাই ২০২৫ – জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের আজ গোপালগঞ্জে এক সমাবেশে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে ‘দুর্বল’ ও ‘অসহায়’ আখ্যা দিয়ে তার পদত্যাগ দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যা স্পষ্টতই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ক্ষমতা ও সক্ষমতার বাইরে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে তার ভূমিকা নিয়েই এই কঠোর সমালোচনা।

গোপালগঞ্জে হামলার প্রতিবাদে উত্তপ্ত সমাবেশ, জামায়াতের দাবী সরকারের প্রতি কঠোর সতর্কতা

আজ গোপালগঞ্জে অনুষ্ঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশে ছাত্রলীগের নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের হামলার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেন জামায়াতের নায়েবে আমির। এই হামলার প্রতিবাদে জামায়াত ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার যৌথ উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ শুধু উদ্বিগ্ন নয়, বরং শঙ্কিত। হাজার হাজার ছাত্র-জনতার জীবন ও রক্তের বিনিময়ে গড়ে ওঠা এই নতুন বাংলাদেশ আজ সংকটের মুখোমুখি। এই অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতা ও সিদ্ধান্তহীনতা থেকে মনে হচ্ছে কোথাও গোপন শক্তি দেশের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্থ করছে।”


স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ‘অসহায়তা’ প্রকাশ পেয়েছে গোপালগঞ্জ ঘটনার মাধ্যমে

নায়েবে আমির আরও বলেন, “গোপালগঞ্জে এনসিপি সমাবেশে হামলার পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলে আমি বুঝতে পেরেছি, তিনি অত্যন্ত অসহায় অবস্থায় আছেন। এই ‘মিস্টার অসহায়’ তার পদ থেকে অবিলম্বে সরে আসা উচিত। কারণ, দেশের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য এমন দুর্বলতা বরদাস্তযোগ্য নয়।”

তাহের বলেন, “মিটফোর্ড হাসপাতালের পুরোনো ঘটনা থেকে শুরু করে গোপালগঞ্জের সাম্প্রতিক হামলার ঘটনা পর্যন্ত পতিত আওয়ামী লীগের দোসরদের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের প্রমাণ।”


প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ জামায়াত

সমাবেশে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “এনসিপি সমাবেশের আগেই প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছিল। তারপরও প্রশাসন কোথায় ছিল? গণমাধ্যমের ফুটেজে দেখা গেছে, যখন হামলা হয়, তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য উপস্থিত ছিলেন না। এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”

তিনি আরো বলেন, “সরকারের উচিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, কিন্তু দেখা যাচ্ছে তারা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলে পক্ষপাতিত্ব করছে।”


জামায়াতের নেতৃবৃন্দের একযোগে প্রতিবাদ ও মিছিল

সমাবেশে জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার আমির মোঃ নুরুল ইসলাম বুলবুল সভাপতিত্ব করেন। সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ, ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি রেজাউল করিম প্রমুখ।

সমাবেশ শেষে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেট থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাব, মৎস্য ভবন প্রদক্ষিণ করে শাহবাগে এসে শেষ হয়। মিছিল থেকে আওয়াজ ওঠে সরকারের প্রতি কঠোর সমালোচনা ও অবিলম্বে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি।


অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মহলে এমন সমালোচনা নতুন নয়। বিশেষ করে দেশে সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী সময়মতো সাড়া দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। অপরাধ ও রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে।

এর মধ্যেই জামায়াতের উচ্চপদস্থ নেতারা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সক্ষমতার বিষয়ে প্রশ্ন তুলছেন এবং বলছেন, দেশের শান্তি রক্ষায় তিনি ‘দুর্বল’ ভূমিকা পালন করছেন।


গোপালগঞ্জ হামলার পেছনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনাটি দেশের রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। এনসিপি সমাবেশ করার অনুমতি পাওয়া সত্ত্বেও সেখানে ছাত্রলীগের নিষিদ্ধ সংগঠনের হামলা অনেকেই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন। এই হামলায় অগণিত মানুষের জীবন বিপন্ন হয়েছে। অনেক প্রখ্যাত রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, এই ধরনের হামলা দেশের গণতন্ত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য মারাত্মক হুমকি।


নাগরিক নিরাপত্তা ও গণতন্ত্রের সংকট

বাংলাদেশে নাগরিক নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক সহিংসতা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ যখন সামাল দিতে না পারার কারণেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে, তখন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।

তবে জামায়াতের অভিযোগ অনুযায়ী, বর্তমান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দুর্বল ও অসহায় অবস্থার কারণে এই সংকট আরও বাড়ছে এবং দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ধ্বংস হতে পারে।


সামাজিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত

বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নাগরিক সমাজের নেতারা জামায়াতের অভিযোগের সঙ্গে অনেকাংশে একমত। তারা বলছেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপব্যবহার বা দুর্বলতার কারণে দেশের নিরাপত্তা ও শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে। তাদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকার যেন এমন একটি দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তি নিযুক্ত করেন, যিনি কঠোরভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে পারবেন।


সমাধানের পথ: স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও জনমত

দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্রের মজবুত ভিত্তি গড়তে হলে সরকারের প্রতি দরকার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করা জরুরি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেন স্বতন্ত্রভাবে কাজ করে, রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত থেকে দেশের স্বার্থে কাজ করে।

জামায়াতের দাবি অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত দ্রুত স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে প্রত্যাহার করে একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া, যাতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হয় এবং জনগণ নিরাপদ বোধ করতে পারে।


উপসংহার

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে ‘দুর্বল’ ও ‘অসহায়’ আখ্যায়িত করে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের পদত্যাগ দাবি নতুন রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলা ও তার পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এই দাবিকে আরও জোরালো করেছে।

দেশে নাগরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র রক্ষা এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যাবশ্যক। সরকার, রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজ একসাথে কাজ করে দেশের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button