বাংলাদেশ

বদলির আদেশ ছিঁড়ে ফেলায় ৯ কর কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত

Advertisement

বদলির আদেশ প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার প্রতিবাদে ৯ কর কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত

সরকারি আদেশ অমান্য করে বদলির চিঠি প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায় ৯ জন কর কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি)। এই কর্মকর্তা-গণ গত মাসে এনবিআরের চলমান আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলো। আজ মঙ্গলবার এনবিআর ও আইআরডির পক্ষ থেকে পৃথক পৃথক বরখাস্তের আদেশ জারি করা হয়েছে।

বরখাস্ত হওয়া কর কর্মকর্তাদের নাম ও পদ

বরখাস্তকৃতদের মধ্যে রয়েছেন:

  • ঢাকা কর অঞ্চল-২-এর যুগ্ম কর কমিশনার মাসুমা খাতুন
  • কর অঞ্চল-১৫-এর যুগ্ম কর কমিশনার মুরাদ আহমেদ
  • কুষ্টিয়া কর অঞ্চলের মোরশেদ উদ্দীন খান
  • নোয়াখালী কর অঞ্চলের যুগ্ম কর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা
  • কক্সবাজার কর অঞ্চলের যুগ্ম কর কমিশনার আশরাফুল আলম প্রধান
  • খুলনা কর অঞ্চলের উপকর কমিশনার শিহাবুল ইসলাম
  • রংপুর কর অঞ্চলের উপকর কমিশনার নুশরাত জাহান
  • কুমিল্লা কর অঞ্চলের উপকর কমিশনার ইমাম তৌহিদ হাসান
  • এনবিআরের প্রথম সচিব তানজিনা রইস

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, তাঁরা গত মাসে এনবিআরের মধ্যে ঘটে যাওয়া ব্যাপক আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন, কেউ কেউ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

কী ঘটেছিল?

গত ২২ জুন এনবিআর থেকে প্রত্যেকের জন্য বদলির আদেশ জারি করা হয়। কিন্তু বদলির ওই চিঠি প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলা হয়, যা প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের সর্বোচ্চ উদাহরণ হিসেবে ধরা হয়। আদেশ অমান্য করায় অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বিষয়টি বিভাগীয় তদন্তের আওতায় নিয়ে আসে। তদন্তে উঠে আসে তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ এবং অফিসিয়াল নিয়মবিধি উপেক্ষা করার অভিযোগ। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের এনবিআরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে পুনঃনিয়োগ দেওয়া হলেও, তাঁরা সাময়িকভাবে চাকরি থেকে মুক্ত থাকবেন। এই সময় তাঁদের বিধিমোতাবেক বেতন ও খোরপোষ ভাতা দেওয়া হবে।

এনবিআর ও আইআরডির শাসন ব্যবস্থায় বদলির গুরুত্ব

কর ব্যবস্থা স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করতে নিয়মিত বদলি একটি অত্যাবশ্যক প্রক্রিয়া। এনবিআর ও আইআরডি এই বদলি আদেশের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও সততার মান বজায় রাখার চেষ্টা করে থাকে। কিন্তু এই আদেশ অমান্য করা প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং আইনের প্রতি অবজ্ঞা হিসেবে বিবেচিত হয়।

গত মাসের এনবিআর আন্দোলনের পেছনের কারণ

বছরের শুরু থেকে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থায় সংস্কার, বেতন-ভাতা পুনর্বিবেচনা ও কর্মপরিবেশ উন্নয়নের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন। ২৮ ও ২৯ জুন এই আন্দোলনের শিখরে সারা দেশে কর্মবিরতি পালন করা হয়, যা সরকারের কাছে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ ছিল। ব্যবসায়ী ও সরকারের মধ্যস্থতায় আন্দোলন প্রত্যাহার করলেও এর প্রভাব এখনো এনবিআরের মধ্যে প্রবল রয়েছে।

শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও তদন্ত

আন্দোলনের পর থেকে এনবিআর ও সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • তিনজন সদস্য ও একজন কমিশনারকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া
  • কাজ বন্ধ রাখায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তৎকালীন কমিশনারকে সাময়িক বরখাস্ত
  • এনবিআরের দুই সদস্য ও ১৬ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনার (দুদক) তদন্ত শুরু

বেশিরভাগ সন্দেহভাজন কর্মকর্তা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন, যার কারণে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

সরকারের কঠোর অবস্থান

অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব এবং এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, “সরকার কোনওরকম অবৈধ কর্মকাণ্ড মেনে নেবে না। বদলি আদেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেও সেটা সংবিধান ও শৃঙ্খলার মধ্যে থাকতে হবে। সরকারি কাজে বাধা দেওয়া চলবে না।”

কর প্রশাসনে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বাংলাদেশের রাজস্ব ব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কারের প্রয়োজন দীর্ঘদিন ধরে বলেই দাবি করে আসছে বিভিন্ন পক্ষ। করদাতাদের সুবিধার্থে সহজ এবং স্বচ্ছ ব্যবস্থার পাশাপাশি দৃষ্টান্তমূলক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠাও অত্যন্ত জরুরি। এনবিআর আধুনিকায়নের পাশাপাশি দাপ্তরিক দুর্নীতি ও অবৈধ প্রভাবমুক্ত করার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে।

সরকারও ঘোষণা দিয়েছে, ভবিষ্যতে কর প্রশাসন আরও দক্ষ ও দায়বদ্ধ হবে। কর্মীদের দায়িত্ব পালনে উদাসীনতা এবং বিদ্রোহমূলক আচরণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বর্তমান ঘটনা থেকে স্পষ্ট যে, সরকারের কর প্রশাসনের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও আধুনিকায়নে কোনো আপোষ থাকবে না। বদলির আদেশ অমান্য করা বা সরকারি কর্ম ব্যবস্থায় বাধা প্রদান করলে শাস্তি ভোগ করতে হবে। এনবিআর-এর আধুনিক ও দক্ষ কর ব্যবস্থার জন্য নতুন করে শৃঙ্খলা ও নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা প্রয়োজন।

সংক্ষেপে

  • ৯ কর কর্মকর্তা বদলির আদেশ প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার কারণে বরখাস্ত
  • গত মাসে এনবিআরের বড় আন্দোলনে তাঁরা সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ও নেতা
  • বিভাগীয় তদন্তের পর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়
  • এনবিআরের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সরকারের কঠোর অবস্থান
  • রাজস্ব ব্যবস্থায় আধুনিকায়নের জন্য প্রয়োজন দৃষ্টান্তমূলক কর্ম পরিবেশ ও নিয়ন্ত্রণ
মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button