বাংলাদেশ

বঙ্গোপসাগরে ভারতের ৩৪ জেলে ও ২টি ট্রলার আটক

Advertisement

বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষার কঠোরতায় এবার অবৈধ মাছ শিকারের অভিযোগে ভারতের ৩৪ জন জেলে ও দুইটি ট্রলার আটক করা হয়েছে। মোংলা বন্দরের কাছাকাছি গভীর সাগরে শনিবার রাতের দিকে বাংলাদেশ নৌবাহিনী এই অভিযান পরিচালনা করে। ‘এফবি ঝড়’ ও ‘এফবি মঙ্গল চন্ডি-৩৮’ নামের ওই ট্রলার দুটিতে অবৈধভাবে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ শিকার করার সময় তাদের আটক করা হয়।

অভিযান ও আটক বিষয়ক বিস্তারিত

মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিসুর রহমান জানান, বাংলাদেশের নৌবাহিনী সাগরে নিয়মিত টহল দিচ্ছিল। ওই সময় জাহাজের রাডারে দুইটি সন্দেহজনক মাছ ধরার ট্রলারের সন্ধান পায় তারা। যখন নৌবাহিনী এগিয়ে যায়, ট্রলার দুটি পালানোর চেষ্টা করে, তবে ধাওয়া করে সেগুলোকে বাংলাদেশের সীমান্তের মধ্যে আটক করা হয়।

আটক হওয়া ট্রলারে ভারতীয় ৩৪ জন জেলে ছিলেন। তাদের সঙ্গে বিপুল পরিমাণ সামুদ্রিক মাছও ছিল, যার মধ্যে ইলিশ মাছের পরিমাণ ছিল উল্লেখযোগ্য। পরে গভীর রাতে আটক জেলেদের মোংলা থানা পুলিশকে হস্তান্তর করা হয়।

অবৈধ অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

ওসি আনিসুর রহমান আরও জানান, আটক জেলেদের বিরুদ্ধে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশ ও মাছ শিকারের’ মামলা প্রক্রিয়াধীন। মোংলা থানায় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

মোংলা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানান, আটক ট্রলার দুটির মাছ ধরার উপকরণ এবং সামগ্রিক পরিমাণ দেখে মনে হচ্ছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করেই মাছ শিকার করছিল। আটক মাছ নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। এ ধরনের অভিযান দেশের মৎস্য সম্পদ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বাংলাদেশের সামুদ্রিক সীমান্ত ও মৎস্য সম্পদ রক্ষা

বাংলাদেশের সামুদ্রিক অঞ্চল, বিশেষ করে বঙ্গোপসাগরের জলসীমা, দেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি বছর হাজার কোটি টাকার সামুদ্রিক সম্পদ মৎস্যশিল্প থেকে আসে, যা দেশের অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখে। এ কারণে অবৈধ মাছ শিকার বা অন্য দেশের জেলেদের অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে নৌবাহিনী ও মৎস্য অধিদফতর সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।

সীমান্ত রক্ষা ও মৎস্য সম্পদ রক্ষায় বাংলাদেশের নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড নিয়মিত টহল চালিয়ে থাকে। এছাড়া স্থানীয় মৎস্য অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে এই ধরনের অভিযান চলছে যাতে মাছ চোরাবাজারি এবং অবৈধ মাছ শিকার বন্ধ করা যায়।

প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সমুদ্র সীমান্ত সমস্যা

বাংলাদেশ ও ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সামুদ্রিক সীমান্ত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কিছু সমস্যার সূত্রপাত রয়েছে। বিশেষ করে মৎস্য সম্পদ নিয়ে দ্বন্দ্ব কম নয়। দুই দেশের জেলেরা প্রাকৃতিক সীমান্তকে অতিক্রম করে মাছ শিকার করে থাকে, যা মাঝে মাঝে উত্তেজনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে সীমান্ত রক্ষায় দুই দেশের নৌবাহিনী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মাঝে মাঝে যৌথ সমন্বয় সভা ও আলোচনা চালিয়ে থাকে। কিন্তু বাস্তবে অবৈধ মাছ শিকারের ঘটনা থামেনি। এই ধরনের অভিযান সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর দৃঢ় পদক্ষেপ।

বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারের গুরুত্ব ও চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশের প্রায় ৭২ হাজার বর্গকিলোমিটার জলসীমা রয়েছে, যেখানে প্রচুর পরিমাণ মাছ ও সামুদ্রিক সম্পদ রয়েছে। ইলিশ মাছ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ এবং এর মৎস্যশিল্প দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখে।

তবে অবৈধ মাছ শিকার, পরিবেশ দূষণ, জলবায়ুর পরিবর্তন এবং সীমান্ত বিবাদ বাংলাদেশের মৎস্যশিল্পের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশের জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে অবৈধ মাছ শিকার করলে স্থানীয় মৎস্যজীবীরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও কৌশল

বাংলাদেশ সরকার মৎস্যশিল্পের উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। অবৈধ মাছ শিকার রোধে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার, সীমান্ত নজরদারি জোরদার এবং আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন মেনে চলার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

নৌবাহিনী ও মৎস্য অধিদফতরের মধ্যে সমন্বয় বাড়িয়ে সীমান্ত এলাকায় আরও কার্যকর টহল চালানোর চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

বঙ্গোপসাগরের সীমান্তে অবৈধ মাছ শিকার রোধে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এই অভিযান দেশের মৎস্য সম্পদ সুরক্ষায় এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দেশের অর্থনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এসব উদ্যোগ অপরিহার্য। ভবিষ্যতেও এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছেন। সামুদ্রিক সম্পদ রক্ষা ও সুরক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধিও জরুরি, যাতে অবৈধ কার্যক্রম থেকে দেশকে রক্ষা করা যায়।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button