সরকার পতনের পর হঠাৎ করেই অনেক পুলিশ সদস্য কর্মস্থলে অনুপস্থিত হয়ে পড়েন। এবার আরও ৪ জন কর্মকর্তার অনুপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ায়, তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হয়েছে কঠোর পদক্ষেপ। তাদের বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও পলায়নের অভিযোগ এনে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
কর্মস্থলে অনুপস্থিত চার পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্ত
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই দেশের প্রশাসনে নানাবিধ পরিবর্তনের ঢেউ দেখা যায়। বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীতে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। অনেক পুলিশ সদস্য কর্মস্থলে যোগ না দিয়ে ‘উধাও’ হয়ে যান।
সাম্প্রতিক সময়ে এমন আরও ৪ জন কর্মকর্তার অনুপস্থিতির তথ্য নিশ্চিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়েছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখা থেকে একদিনে চারটি পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করে এদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের পরিচয়
যে চারজন পুলিশ কর্মকর্তাকে এবার বরখাস্ত করা হয়েছে, তারা হলেন—
- মো. রওশানুল হক সৈকত — অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি), তেজগাঁও বিভাগ, ডিএমপি।
- মো. তৌহিদুল ইসলাম — অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ।
- গোলাম রুহানী — সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি), ডিএমপি।
- মফিজুর রহমান পলাশ — সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি), মিরপুর ট্রাফিক জোন, ডিএমপি।
তাদের অনুপস্থিতির দিন থেকেই বরখাস্তের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে কী বলা হয়েছে?
সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা ২০১৮-এর ধারা অনুযায়ী, বিনা অনুমতিতে দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা ‘অসদাচরণ’ এবং ‘পলায়ন’-এর পর্যায়ে পড়ে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে:
- রওশানুল হক সৈকত গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে অনুপস্থিত।
- তৌহিদুল ইসলাম ১০ সেপ্টেম্বর থেকে কর্মস্থলে আসেননি।
- গোলাম রুহানী ১১ আগস্ট থেকে অনুপস্থিত।
- মফিজুর রহমান পলাশ ৬ আগস্ট থেকে কর্মস্থলে আসছেন না।
উল্লেখিত বিধিমালা অনুযায়ী, এ ধরনের অনুপস্থিতি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই তারা বর্তমানে সাময়িকভাবে বরখাস্ত রয়েছেন। তবে বরখাস্তকালীন তারা খোরপোষ ভাতা পাবেন।
আগে কী হয়েছিল?
এটা প্রথম ঘটনা নয়। এর আগেও একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুপস্থিতির অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এই চারজনসহ মোট ২১ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে ইতোমধ্যেই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এর আগে ডিআইজি, এসপি স্তরের কর্মকর্তারাও এমন শাস্তির মুখে পড়েছেন।
ঘটনার রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড
সরকার পতনের পরবর্তী সময় ছিল প্রশাসনের জন্য অনেকটা অস্থিরতার। এ সময় বিভিন্ন স্তরের সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের আচরণে বিচ্যুতি দেখা যায়।
বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীতে দেখা দেয় অসামঞ্জস্য। কেউ কেউ ‘ছুটি ছাড়াই’ কর্মস্থলে না আসার সিদ্ধান্ত নেয়, যা সরকারি নিয়মের চরম লঙ্ঘন।
এই বরখাস্তের প্রভাব কী হতে পারে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারের এই কঠোর সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে পুলিশ বাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হতে পারে।
একজন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা জানান,
“প্রশাসনে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হলে এমন দৃষ্টান্তমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরি।”
তবে এর ফলে বাহিনীর অভ্যন্তরীণ চাপে আরও কর্মকর্তার ‘উধাও’ হওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন অনেকে।
বিশ্লেষকদের মতামত
প্রশাসনিক বিশ্লেষক রাশেদুল ইসলাম বলেন,
“বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হয়তো নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নিজ অবস্থান নিয়ে দ্বিধায় ছিলেন। তবে সরকারি বিধিমালা মানা প্রত্যেক কর্মচারীর দায়িত্ব।”
তিনি আরও যোগ করেন,
“এভাবে একের পর এক বরখাস্তের মাধ্যমে সরকার একটি বার্তা দিতে চাইছে — শৃঙ্খলার বাইরে কেউই নয়।”
এখন কী হতে পারে?
এই ঘটনা একদিকে প্রশাসনিক শৃঙ্খলার প্রতীক, অন্যদিকে এটি তুলে ধরছে বাহিনীর অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েনের চিত্র।
বিশ্লেষকদের মতে, “আগামী দিনে আরও অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত ও শাস্তি আসতে পারে। তবে বড় প্রশ্ন হলো— পুলিশ বাহিনী আদৌ এই অবস্থার মোকাবিলা করতে প্রস্তুত তো?”
এম আর এম – ০৩২৭, Signalbd.com



