ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের জেরে বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ছে

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার সামরিক উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করায় বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের পাশাপাশি সোনার দামও দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা শনিবার সকালেও অব্যাহত রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার মূল্য বৃদ্ধির ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নিরাপদ বিনিয়োগের প্রতি আকর্ষণ আরও বাড়ছে।
সোনার মূল্য বৃদ্ধি: বিস্তারিত পরিসংখ্যান
গতকাল শুক্রবার থেকে আজ শনিবার সকাল পর্যন্ত সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৫৪.০২ ডলার বা ১.৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে সোনার দাম দাঁড়িয়েছে আউন্সপ্রতি ৩,৪৩৩.৪৭ ডলার। রুপার দামের ক্ষেত্রেও বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে, যা বেড়েছে ০.০৯ ডলার বা ০.২৫ শতাংশ, এখন আউন্সপ্রতি ৩৬.৩২ ডলার।
বিশ্ববাজারে স্পট মার্কেটে সোনার দাম বর্তমানে ৩,৪৩৩ ডলারে পৌঁছেছে, আর গোল্ড ফিউচার্সের দাম রয়েছে ৩,৪৫২.৮০ ডলার। রুপার দাম স্পটে ৩৬.৩২ ডলার এবং ফিউচার্সে ৩৬.৩৫ ডলার।
উত্তেজনার কারণ: ইসরায়েল-ইরান সংঘাত
গত দুদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যের দুই বড় প্রতিবেশী দেশের মধ্যকার পাল্টাপাল্টি সামরিক হামলার কারণে বিশ্ববাজারে নিরাপদ বিনিয়োগের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি এড়াতে সোনায় বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন, কারণ সোনা ঐতিহ্যগতভাবে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার সময় নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বিবেচিত হয়।
শুক্রবার সোনার দাম ০.৯ শতাংশ বেড়ে আউন্সপ্রতি ৩,৪১৭.১০ ডলারে পৌঁছেছিল। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৩,৫০০ ডলারে উঠে একটি রেকর্ড স্পর্শ করেছিল, আর এখন তা পুনরায় তার কাছাকাছি চলে এসেছে।
বিশ্লেষকদের মতামত: দাম কোথায় যাবে?
বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ের ফিউচার্সের দাম ৩,৪৪৪ ডলারের কাছাকাছি এসে স্থির হবে। যদি মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা কমে যায় তবে সোনার দাম স্বল্পমেয়াদে কিছুটা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এখনকার পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত সোনার চাহিদা ও দাম দুটোই বাড়তে থাকবে।
সোনার আকর্ষণ বাড়ার পেছনের কারণ
সোনায় বিনিয়োগ করা হয় মূলত কারণ এখানে সুদ বা ডিভিডেন্ড না থাকলেও, মূল্য সংরক্ষণ ও নিরাপত্তার দিক থেকে এটি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যখন সুদের হার কমার আশঙ্কা থাকে, তখন সোনার জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। বর্তমানে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার নীতিতে সম্ভাব্য পরিবর্তনের আশঙ্কা সোনার দাম বাড়ানোর একটি বড় কারণ।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও অর্থনীতির প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য আলোচনা অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা গত সপ্তাহ থেকেই সোনার দাম বাড়ার একটি কারণ হিসেবে কাজ করছে। যদিও সাম্প্রতিক আলোচনায় কিছু অগ্রগতি হয়েছে, তবে চূড়ান্ত বাণিজ্য চুক্তির অভাব বাজারে আস্থার ঘাটতি তৈরি করেছে।
মার্কিন বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকস যুক্তরাষ্ট্রের মন্দার সম্ভাবনা কমিয়ে ৩৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য আলোচনায় সক্রিয়তা বৃদ্ধির কারণে বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।
ভবিষ্যত দৃষ্টিভঙ্গি ও বাজারের অস্থিরতা
ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের কারণে সোনার দাম অস্থির থাকবে। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হলে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৩,৫০০ ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম নয়। বিশেষ করে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য সোনার দিকে বেশি ঝুঁকছেন।
মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত, মূল্যস্ফীতি এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যের গতিপ্রবাহ সোনাসহ অন্যান্য পণ্যের মূল্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
সোনা: বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ আশ্রয়
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার এই সময়ে সোনা বিনিয়োগকারীদের কাছে সবচেয়ে বিশ্বস্ত এবং নিরাপদ সম্পদ হিসেবে গণ্য হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এই দামের ওঠানামা বিনিয়োগকারীদের জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সোনার বাজারে কীভাবে থাকবেন সতর্ক?
- অস্থির পরিস্থিতিতে বিনিয়োগের আগে বিশ্লেষণ করুন
- বিভিন্ন তথ্য ও খবর পর্যবেক্ষণ করুন
- দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের কথা চিন্তা করুন
- বিভিন্ন বিনিয়োগ পোর্টফোলিও তৈরি করুন
ইসরায়েল-ইরান সংঘাত বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও সোনার মূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। সোনা দীর্ঘদিন ধরে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার সময় বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে কাজ করে আসছে। বর্তমানে সোনার দাম ঊর্ধ্বমুখী হলেও বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা কমলে স্বল্পমেয়াদে দাম কিছুটা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা থাকায় সোনায় বিনিয়োগ চলতেই পারে।