বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক বিদেশি বিনিয়োগকারী ও বিদেশি কর্মীদের জন্য সুখবর এসেছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ঘোষণা করেছে, বিদেশি কর্মীদের নিরাপত্তা ছাড়পত্র (সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স) এবং ভিসা নবায়ন প্রক্রিয়া এখন থেকে সম্পূর্ণ অনলাইনে করা যাবে।
এই উদ্যোগ বিনিয়োগকারীদের জন্য এক বড় সুবিধা বয়ে আনবে এবং বিনিয়োগ পরিবেশকে আরও সহজ ও স্বচ্ছ করবে। বিডার ওয়ান স্টপ সার্ভিস (OSS) পোর্টাল ব্যবহার করে বিদেশি কর্মীরা নিরাপত্তা ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করতে পারবেন, প্রয়োজনীয় নথি জমা দিতে পারবেন এবং অনুমোদনও পাবেন ডিজিটালি।
কবে থেকে শুরু হবে অনলাইন সেবা?
বিডার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর ২০২৫ এর মাঝামাঝি সময় থেকে এই সেবা কার্যকর হবে। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনি, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের (ডিআইপি) প্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং বিভিন্ন বিনিয়োগ সংস্থার কর্মকর্তারা।
নতুন নিয়মে কী সুবিধা মিলবে?
বিদেশি কর্মীদের জন্য নিরাপত্তা ছাড়পত্রের প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে জটিল ছিল। সশরীরে আবেদন, কাগজপত্র জমা এবং দীর্ঘ সময় অপেক্ষা বিনিয়োগকারীদের জন্য ঝামেলার কারণ হয়ে দাঁড়াত। কিন্তু নতুন অনলাইন ব্যবস্থায়:
✔ সম্পূর্ণ অনলাইন প্রক্রিয়া: আবেদন, নথি জমা, ফি পরিশোধ এবং ছাড়পত্রের অনুমোদন সবকিছুই ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে।
✔ সময় সাশ্রয়: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সার্কুলার অনুযায়ী, আবেদন জমা দেওয়ার পর সর্বোচ্চ ২১ কর্মদিবসের মধ্যে নিরাপত্তা যাচাই সম্পন্ন হবে।
✔ যদি ২১ দিনে যাচাই শেষ না হয়?
তাহলে আবেদনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ‘নিরাপত্তা আপত্তি নেই’ হিসেবে গণ্য হবে এবং ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হবে।
✔ ভিসা নবায়নও অনলাইনে: শুধু নিরাপত্তা ছাড়পত্র নয়, ভিসা নবায়ন এবং ভিসা ফি পরিশোধের প্রক্রিয়াও ডিজিটাল হবে। ফলে বিদেশি কর্মী ও বিনিয়োগকারীদের আর সশরীরে আবেদন করতে হবে না।
ভিসা নীতিতে নতুন সংস্কার
সভায় আরও জানানো হয়েছে, শিগগিরই নতুন বিনিয়োগবান্ধব ভিসা নীতি চালু হবে। ভিসা অন অ্যারাইভাল ফি পরিশোধও করা যাবে অনলাইনে। পাশাপাশি একটি আন্তসংস্থাগত তথ্যভান্ডার (Inter-operable Database) তৈরি করা হবে, যা বিদেশিদের আগমন, অবস্থান ও তথ্য বিনিময়কে আরও কার্যকর করবে।
এই ডেটাবেজের মাধ্যমে:
- বিনিয়োগকারীদের তথ্য দ্রুত যাচাই করা যাবে।
- আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি পাবে।
- বিদেশি নাগরিকদের চলাচল পর্যবেক্ষণ আরও সহজ হবে।
বিডার বক্তব্য
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেছেন:
“নিরাপত্তা ছাড়পত্র ডিজিটাল হওয়া একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। এতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য ঝামেলা অনেক কমে যাবে। আমাদের লক্ষ্য ডিসেম্বরের মধ্যে ভিসা ও কর্মানুমতি সম্পর্কিত আরও সংস্কার বাস্তবায়ন করা।”
তিনি আরও জানান, বিডা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) ও বাংলাদেশ ব্যাংক-এর সঙ্গে মাসিক সমন্বয় সভা করে। এখন থেকে নিরাপত্তা ছাড়পত্র ও কর্মানুমতি সম্পর্কিত সংস্থাগুলোর সঙ্গেও নিয়মিত সমন্বয় করা হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনি জানিয়েছেন:
“ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য বিডার সঙ্গে নিয়মিত সমন্বয় করা হবে। আমাদের লক্ষ্য প্রক্রিয়াটি আরও সহজ ও কার্যকর করা।”
কেন এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ?
বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে। বিশেষ করে ইপিজেড (EPZ), হাইটেক পার্ক এবং বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্পগুলোতে বিদেশি কর্মীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। কিন্তু জটিল প্রশাসনিক প্রক্রিয়া বিনিয়োগকারীদের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল।
ডিজিটাল নিরাপত্তা ছাড়পত্র ও অনলাইন ভিসা নবায়ন ব্যবস্থা চালু হলে:
- সময় ও খরচ সাশ্রয় হবে।
- বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি হবে।
- বাংলাদেশের ‘Ease of Doing Business’ সূচক উন্নত হবে।
বর্তমানে বিদেশি কর্মীর সংখ্যা কত?
বিডার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ২.৫ লাখ বিদেশি কর্মী কাজ করছেন, যারা মূলত গার্মেন্টস, অবকাঠামো, আইটি, বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং উন্নয়ন প্রকল্পে নিয়োজিত। তাদের বেশিরভাগ এসেছেন চীন, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে।
প্রতিবছর বিদেশি কর্মীদের কর্মানুমতি ও ভিসা নবায়নে হাজার হাজার আবেদন জমা হয়। অনলাইন সেবা চালু হলে এই বিপুল সংখ্যক আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে।
ভবিষ্যতে কী আসছে?
বিডা জানিয়েছে, ডিসেম্বরের মধ্যে:
- কর্মানুমতি প্রদান প্রক্রিয়া আরও দ্রুত করা হবে।
- ভিসা নবায়ন ও ফি প্রদানের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয় করা হবে।
- বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ কাস্টমার সাপোর্ট সেন্টার চালু করা হবে।
ডিজিটালাইজেশনের এই উদ্যোগ শুধু বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য নয়, বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্যও বড় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সহজ, দ্রুত এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়া বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে এবং দেশের উন্নয়নকে আরও ত্বরান্বিত করবে।
MAH – 12629, Signalbd.com



