বাংলাদেশ

মসজিদে কুপিয়ে জখম করা সেই খতিব বেঁচে আছেন

Advertisement

 চাঁদপুর শহরের মোল্লাবাড়ি জামে মসজিদে জুমার নামাজ শেষে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খতিব আ ন ম নূরুর রহমানের ওপর হামলা চালায় এক মুসল্লি। পরিবার নিশ্চিত করেছে, খতিব জীবিত ও এখন শঙ্কামুক্ত। ঘটনার পর মামলা দায়ের এবং অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হয়েছে।

মসজিদে রক্তাক্ত হামলা: কী ঘটেছিল মূলত?

চাঁদপুর শহরের প্রফেসরপাড়া মোল্লাবাড়ি জামে মসজিদে শুক্রবার (১১ জুলাই) জুমার নামাজের পর ঘটে এক ভয়াবহ ঘটনা। খুতবা শেষে খতিব আনম নূরুর রহমান (৬৮)-এর ওপর চাপাতি দিয়ে হামলা চালায় মুসল্লি পরিচয়ধারী বিল্লাল হোসেন (৫০)। মসজিদের ভেতরেই এই হামলা ঘটায় তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নামাজ শেষে মুসল্লিরা বের হয়ে গেলে হামলাকারী চাপাতি বের করে খতিবের ঘাড় লক্ষ্য করে আঘাত করে। তবে কোপ লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে তাঁর কানে ও গলায় লেগে গুরুতর জখম হয়। মুমূর্ষু অবস্থায় নূরুর রহমানকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে এবং পরে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।

কে এই খতিব, কেন তাকে লক্ষ্য করা হলো?

আ ন ম নূরুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে মোল্লাবাড়ি জামে মসজিদের খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তাঁর খুতবা ও ধর্মীয় বক্তব্য স্থানীয় মুসল্লিদের কাছে সমাদৃত হলেও, অভিযুক্ত বিল্লাল হোসেন তাঁর বক্তব্যে ‘অসন্তুষ্ট’ ছিলেন বলে জানা গেছে।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রতিবারের মতো গতকালও খতিব সাহেব বাংলা ভাষায় খুতবা দেন, যা নিয়ে অভিযুক্তের আপত্তি ছিল। পূর্ব থেকেই বিরূপ মনোভাব পোষণ করায় তিনি এ হামলা করেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মামলা, গ্রেপ্তার ও পুলিশের পদক্ষেপ

ঘটনার পরপরই খতিবের বড় ছেলে আফনান তাকি বাদী হয়ে চাঁদপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় পরিকল্পিত হত্যাচেষ্টা, ত্রাস সৃষ্টি ও ধারালো অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়েছে।

চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. বাহার মিয়া বলেন, “আমরা বিল্লাল হোসেনকে ঘটনাস্থলেই স্থানীয়দের সহায়তায় আটক করি। তাকে আদালতে উপস্থাপন করা হলে সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।”

পুলিশ ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে।

চিকিৎসা ও বর্তমান অবস্থা

নূরুর রহমান বর্তমানে ঢাকার হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিনি এখন শঙ্কামুক্ত এবং চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন।

ছেলে রায়হান রাহি জানান, “আমার বাবা এখন আগের চেয়ে ভালো আছেন। চিকিৎসকরা আশাবাদী। তবে আমরা চাই, এই ঘটনার যথাযথ বিচার হোক।”

সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও জনমনে উত্তেজনা

হামলার ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই ভেবে নিয়েছিলেন খতিব মারা গেছেন, তবে পরিবার নিশ্চিত করে জানান — তিনি জীবিত এবং এখন বিপদমুক্ত।

ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, মসজিদের মতো পবিত্র জায়গায় এ ধরনের সহিংসতা কখনোই কাম্য নয়। সামাজিক ও ধর্মীয় নেতারা দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছেন।

হামলার নেপথ্যে কী ছিল?

অনেকেই মনে করছেন, ধর্মীয় মতবিরোধ বা ব্যাখ্যাগত বিভ্রান্তিই এই হামলার মূল কারণ। বাংলা ভাষায় খুতবা দেওয়া নিয়ে বিভিন্ন সময় কিছু চরমপন্থী মনোভাবের ব্যক্তি আপত্তি জানিয়ে থাকেন, যা থেকে উত্তেজনার সৃষ্টি হতে পারে।

তবে এ ঘটনায় সন্দেহ রয়েছে অন্য কোনো উস্কানি বা পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ছিল কিনা — সেটি খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

পরবর্তী ধাপ কী?

বর্তমানে মামলার তদন্ত চলছে এবং হামলাকারীর উদ্দেশ্য, পটভূমি ও সম্পৃক্ততা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে পুলিশ। রিমান্ডে নিয়ে আরও তথ্য উদঘাটনের সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে স্থানীয়দের মধ্যে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।


“আমার বাবার ওপর হামলা ছিল পরিকল্পিত। আমরা এর বিচার চাই এবং চাই দোষীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক”—আফনান তাকি, আহত খতিবের ছেলে

সারসংক্ষেপ  

একটি পবিত্র ধর্মীয় স্থানে এমন সহিংসতার ঘটনা আমাদের সমাজকে ভাবিয়ে তোলে। বিচার ও তদন্তের সুষ্ঠু প্রক্রিয়া যেমন প্রয়োজন, তেমনই দরকার ধর্মীয় সহনশীলতা ও মতপার্থক্যের প্রতি সহিষ্ণুতা। তবে প্রশ্ন রয়ে যায়—আমরা কি এমন ঘটনাকে একবারেই বন্ধ করতে পারবো, নাকি সমাজে এ ধরনের বিভ্রান্তি বারবার ফিরে আসবে?

  এম আর এম – ০৩০৫, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button